বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য - প্রবন্ধ রচনা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

বাংলাদেশ এক লাখ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশ সত্তর বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট একটি দেশ। গাঙ্গেয় অববাহিকায় সাগর থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এ দেশ উর্বর পলিমাটি-সমৃদ্ধ। উত্তরে ভাওয়াল ও মধুপুর গড়। গেরুয়া রঙের মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গজারি গাছ। দক্ষিণে ৪৪৫ মাইলব্যাপী বঙ্গোপসাগর আর সুন্দরবন । পুবে আসামের শ্রেণিবদ্ধ পাহাড়গুলো দাঁড়িয়ে আছে ঠিক যেন দেহরক্ষীর মতো। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সাজানো চা বাগান। এরই মাঝে মাঝে বিশাল সব ছায়াবৃক্ষ। পাশ দিয়ে বয়ে চলে পাহাড়ি নদী। রুপালি মাছেরা আনমনে খেলা করে সেই নদীতে। পশ্চিমে ধু-ধু প্রান্তর। প্রকৃতির রুক্ষতার মধ্যেও এখানে দেখা যায় সারি সারি আম্রকানন, আখের খেত কিংবা পানের বরজ।


 বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য

রূপসি বাংলাদেশ(রা. বো '০৭; কু, বো, '০১; ব. বো,

 ০২, ০৩, ১৬;বো. ০৩; সি. বো, '০৬; য.বো. ২০১৯)

রূপসি বাংলারা. (য. বো. ২০০৪; চট্ট, বো. ওদিবো. ২০১৭)

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য/সৌন্দর্য (ঢা. বো. ২০১২, '১৫; ব.বো. ২০১৯)


এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার ? কোথায় এমন ধূম্র পাহাড় ?

কোথায় এমন তরিৎক্ষেত্র আকাশতলে মেশে ?

এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে?

সে আমারই সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা, সাগর-মেখলা, বন-কুন্তলা সোনার দেশ – বাংলাদেশ। প্রকৃতি তার উদার অকৃপণ হাতে অপরূপ সৌন্দর্য আর মাধুর্য ছড়িয়ে সমৃদ্ধ করেছে এ দেশকে।

বাংলাদেশ এক লাখ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশ সত্তর বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট একটি দেশ। গাঙ্গেয় অববাহিকায় সাগর থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এ দেশ উর্বর পলিমাটি-সমৃদ্ধ। উত্তরে ভাওয়াল ও মধুপুর গড়। গেরুয়া রঙের মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গজারি গাছ। দক্ষিণে ৪৪৫ মাইলব্যাপী বঙ্গোপসাগর আর সুন্দরবন । পুবে আসামের শ্রেণিবদ্ধ পাহাড়গুলো দাঁড়িয়ে আছে ঠিক যেন দেহরক্ষীর মতো। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সাজানো চা বাগান। এরই মাঝে মাঝে বিশাল সব ছায়াবৃক্ষ। পাশ দিয়ে বয়ে চলে পাহাড়ি নদী। রুপালি মাছেরা আনমনে খেলা করে সেই নদীতে। পশ্চিমে ধু-ধু প্রান্তর। প্রকৃতির রুক্ষতার মধ্যেও এখানে দেখা যায় সারি সারি আম্রকানন, আখের খেত কিংবা পানের বরজ।


সমতল বদ্বীপ হিসেবে পরিচিত হলেও দক্ষিণের পার্বত্য জেলাগুলোতে এবং সিলেট আর ময়মনসিংহের সীমান্তে আছে পাহাড়ি এলাকা। তাই সাগরের গর্জন মুখরতা, পাহাড় আর বনাঞ্চলের সবুজ শ্যামল স্নিগ্ধতা নদীমাতৃক এ দেশকে করেছে বৈচিত্র্যময়, রূপসি। তাই মনের অজান্তেই মন গেয়ে ওঠে -

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবন। এর রয়েছে বিশ্ব পরিচিতি। সুন্দরবনকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে গড়েউঠেছে স্বতন্ত্র জীবনধারা। বিশ্বের সেরা প্রজাতির গাছপালা-সমৃদ্ধ সুন্দরবন মূলত 'সুন্দরী' গাছের জন্যে বিখ্যাত। সুন্দরবনের 'রয়েল বেঙ্গল টাইগার' আর চিত্রল হরিণ বিশ্বে অনন্য। নদীতে আছে কুমির। এ ছাড়াও আছে নানা জাতের পাখি আর অজগর সাপ। সব মিলিয়ে সুন্দরবনে ঘটেছে ভয়ংকর আর সুন্দরের বিচিত্র সমাবেশ।

দক্ষিণে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৈকত। ফেনিল সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠা দ্বীপগুলোয় সারি সারি নারকেল আর সুপারি বাগান। সাগরের সাথে দ্বীপাঞ্চলবাসীর অপূর্ব মিতালি। মাঝে মাঝে বিক্ষুব্ধ সাগর ভুলে যায় সে কথা। প্রবল আক্রোশে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব। তবুও নতুন আশায় বুক বাঁধে এখানকার অকুতোভয় মানুষ । সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে আবার দুলে ওঠে জেলে নৌকা। রাতে এসব নৌকায় জ্বলে লণ্ঠনের আলো। আকাশ ভেঙে জ্যোৎস্না নামে।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল এলাকা জুড়ে সীমাহীন সৌন্দর্যের সমাবেশ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আদিবাসীদের বসবাস। এরাও প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার।

হাতে গোনা শহরগুলো বাদ দিলে বাংলাদেশ বলতেই গ্রাম বাংলা। এই গ্রাম বাংলার অপরূপ রূপবৈচিত্র্যে এ দেশ গর্বিত । গ্রামের সৌন্দর্য নিটোল, এতটুকু কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই তাতে। যতদূর দৃষ্টি যায় সবুজ মাঠ, কোথাও কোথাও সবুজের অবগুণ্ঠন ভেদ করে সোনালি শস্যের উঁকিঝুঁকি। মেঠো পথের ধারে হয়তো বা মৌনী তাপসের মতো দাঁড়িয়ে ছায়া দিচ্ছে বিশাল বট কিংবা অশ্বত্থ গাছ। গাছপালায় ঘেরা ছোট ছোট ঘরগুলো 'ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়’ । পুকুর, নদী, বিল কিংবা ঝিলে কাকের চোখের মতো স্বচ্ছ কালো জল। ফুটে আছে শাপলা – সাদা, লাল কিংবা গোলাপি। এরই পাশে হয়তো একঝাঁক রাজহাঁস আপন মনে খেলছে জলের খেলা । ঠিক দুপুরে কাছেই কোথাও একটানা ডেকে চলেছে অলস বিরহী ঘুঘু। ক্লান্ত রাখাল গরু চরানোর ফাঁকে গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বাঁশিতে তুলছে অপূর্ব সুর। গ্রাম বাংলার এই অকৃত্রিম সৌন্দর্যে রূপমুগ্ধ কবি গেয়েছেন –

অবারিত মাঠ, গগন ললাট, চুমে তব পদধূলি

ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।

পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ

স্তব্ধ অতল দীঘি কালো-জল নিশীথ শীতল স্নেহ।

গ্রাম বাংলার সন্ধ্যার রূপটি আরও মধুময়। গোধূলি বেলায় রাখাল মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফেরে। দিনান্তে কাজ শেষে ঘরে ফেরে গাঁয়ের চাষি, পাখিরা ফেরে নীড়ে। সূর্য প্রায় অস্ত যায় যায়। চারিদিকে এক অপার্থিব আলো। দূরে নীল আকাশের বুক চিরে দল বেঁধে উড়ে যায় বলাকারা। রাতে বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ ওঠে। ঢেলে দেয় জ্যোৎস্নার আলো। নিকোনো উঠোনে গাছের ছায়ার ফাঁকে ফাঁকে জ্যোৎস্নার আলো নানা আকৃতি নেয়, চলে আলো-আঁধারির অপূর্ব খেলা।

নদীমাতৃক বাংলার মাটিকে উর্বর করেছে অসংখ্য নদী-উপনদী। শীতে নদীগুলো খানিকটা শুকিয়ে এলেও বর্ষায় যেন নতুন প্রাণ পেয়ে দুকূল ছাপিয়ে যায়। নদীপথে তখন সাদা পাল উড়িয়ে সারি সারি নৌকো চলে। সে এক অভাবনীয় সৌন্দর্য। যেন একপাল রাজহাঁস ডানা মেলে ভেসে বেড়াচ্ছে নদীর বুকে।

বিভিন্ন ঋতুর রূপবৈচিত্র্যে বাংলাদেশের নৈসর্গিক দৃশ্যের বিরাট পরিবর্তন ঘটে। পালাবদলের খেলায় বৈচিত্র্যময় রূপের পসরা নিয়ে আসে ছয় ঋতু।

গ্রীষ্মের আগমনে বাংলার প্রকৃতি রুক্ষ, বিবর্ণ ও বিশুষ্ক হয়ে ওঠে। চিড় ধরে মাটিতে, হারিয়ে যায় অপরূপ সবুজ প্রকৃতির শ্যামল শোভা। ভয়াল রুদ্র রূপ নিয়ে, ধুলোর ঝড় তুলে আসে কালবৈশাখী। বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে হার মানে গাছপালা। ভেঙে মুচড়ে যায়। রুক্ষতা আর কঠোরতার মধ্যেও প্রকৃতি এ সময় ডালি ভরে সাজিয়ে দেয় বিচিত্র সব ফল।

প্রচণ্ড রুক্ষতার পর সজল কালো মেঘময় দিনের ছায়া নামে বাংলাদেশে। পালটে যায় প্রকৃতির চেনা রূপ। বৃষ্টির অঝোর ধারায় গাছে গাছে পাতায় পাতায় লাগে শিহরন, জাগে সজীবতা। কেয়া, কদম আর যূথীফুল পাপড়ি মেলবার প্রতিযোগিতায় মাতে। কালো মেঘের দল পলকে পলকে হানে বিদ্যুৎ-বাণ। বৃষ্টিস্নাত গ্রামগুলোকে মনে হয় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা দ্বীপ। জলের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে ধান আর পাটের সবুজ চারা। প্রবল বর্ষণে কখনো কখনো নেমে আসে বন্যা। তখন গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয় – হয় ফসলহানি।

শরতের প্রথম দিকে সারাদিন চলে মেঘ বৃষ্টি আর আলোর লুকোচুরি খেলা। এই খেলা খেলতে খেলতেই বখার কালো মেঘের দল কোথায় যেন একেবারে লুকিয়ে যায়। ঝকঝকে নীল আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ পাল তুলে ভেসে বেড়ায়। সারারাত ফুটে ফুটে ভোরবেলায় ঝরে পড়ে শিউলি। নদীতীরে কাশফুল শুভ্র হাসি ছড়িয়ে দেয় দিগন্তে।

হেমন্তে ঘরে ঘরে ফসল ওঠে। ঢেঁকির তালে তালে ধান ভানার গানে গানে গ্রামগুলো মুখরিত হয় নবান্ন উৎসবে। সকালের সোনালি রোদে যখন সোনালি ধানের ডগা বাতাসে দোল খায় তখন মনে হয় চারদিকে সোনা ছড়ানো। পিঠে-পুলির উৎসবে মুখরিত হলেও হেমন্তে প্রকৃতি থাকে শান্ত, সৌম্য।

উৎসব প্রমত্ত বাংলার বুকে শীত বুলিয়ে দেয় হিমেল হাওয়া। ভোরের ঘন কুয়াশার আবরণের অন্তরালে প্রকৃতি তার সমস্ত রূপসজ্জার অলংকার ছুঁড়ে ফেলে রিক্ত বৈরাগীর রূপ নেয়। গাছপালা হারায় সজীবতা। শুরু হয় পাতা ঝরার পালা। অন্যদিকে নানারকম শাকসবৃত্তি আর রঙ-বেরঙের ফুলের শোভায় প্রকৃতির মালঞ্চ ভরে ওঠে।

শিশিরসিক্ত যেসব পাতা পড়ি পড়ি করেও পড়েনি হঠাৎ একদিন বসন্তের দখিনা পবনে সেগুলো ঝরে যায়। প্রকৃতিতে দারুণ চাঞ্চল্য জাগে। গাছে গাছে কোথা থেকে আবার ফিরে আসে পাখিরা। গাছের শূন্য শাখা-প্রশাখা নতুন সবুজ কিশলয়ে বিকশিত হয়। অশোক, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া আর শিমুলের গাছে যেন লাল ফুলের আগুন লাগে। শেষ বিকেলের ‘কনে দেখা আলো' মিলিয়ে যেতে না যেতেই আকাশে সন্ধ্যাতারা দেখা যায়। রাত একটু গভীর হতেই লাখো তারায় ছেয়ে যায় আকাশ। একসময় চৈতালি ঝড় ওঠে। উড়িয়ে নেয় পাতা ফুল—সব। বোঝা যায়, আবার আসছে গ্রীষ্ম।

বিচিত্র আর অফুরন্ত সৌন্দর্যের ডালি সাজানো এই বাংলাদেশ। দুচোখ ভরে যায় তার স্নিগ্ধতায়, মনকে ভাবুক করে তোলে তার অফুরন্ত সৌন্দর্য। তাই দৈনন্দিন প্রাত্যহিকতা ছাপিয়ে মানুষ হয়ে ওঠে ভাবুক। প্রকৃতির পরতে পরতে ছড়ানো আল্পনা আমাদের মনের ক্যানভাসে বুলিয়ে দেয় নানা রঙের তুলির ছোঁয়া। তাই হৃদয়ের মণিকোঠা থেকে উঠে আসে গভীর এক বোধ-----

তোমার যেখানে সাধ চলে যাও

আমি এই বাংলার পরে রয়ে যাব।

[ অনুরূপ রচনা : রূপসি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য]

আর্টিকেলের শেষকথাঃ   বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য - প্রবন্ধ রচনা 

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম  বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য - প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই  বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য - প্রবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

পাছে লোকে কিছু বলে নিয়ে উক্তি,বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা,সোনার দেশ,অশোক গাছ,,


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url