বাংলাদেশের নদ-নদী - প্রবন্ধ রচনা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

ভূমিকা : সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে খ্যাতি তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নদীর। ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী বয়ে গেছে এ দেশের ওপর দিয়ে। বাড়িয়েছে দেশের সৌন্দর্য। আর এইসব নদী-বিধৌত পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বাংলা অববাহিকা। বাঙালির জীবন-যাত্রায় আর সংস্কৃতিতে এইসব নদ-নদীর প্রভাব অপরিসীম।

বাংলাদেশের নদ-নদী

(কু বো, ২০০৯ )

ভূমিকা : সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে খ্যাতি তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নদীর। ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী বয়ে গেছে এ দেশের ওপর দিয়ে। বাড়িয়েছে দেশের সৌন্দর্য। আর এইসব নদী-বিধৌত পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বাংলা অববাহিকা। বাঙালির জীবন-যাত্রায় আর সংস্কৃতিতে এইসব নদ-নদীর প্রভাব অপরিসীম।

নদীর জন্ম ও প্রবাহ : অধিকাংশ নদীর জন্ম হয় হিমবাহ থেকে। এ ছাড়া হ্রদ বা ঝরনা এবং প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের অঞ্চল থেকেও নদীর জন্ম হতে পারে। যেখান থেকে নদীর জন্ম হয় তাকে বলে নদীর উৎস। নদী যেখানে সাগরের সাথে মেশে সে অংশকে বলে মোহনা। চলার পথে দুপাশ থেকে কিছু কিছু ছোট ও মাঝারি নদী বড় নদীর জল প্রবাহের সাথে মেশে, সেগুলো উপনদী হিসেবে পরিচিত। আবার নদী থেকে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যেসব নদী সাগরে মেশে সেগুলো শাখা নদী। বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলী, মাতামুহুরী, কপোতাক্ষ, ধলেশ্বরী এবং এদের উপনদী ও শাখানদীগুলো জালের মতো বিস্তৃত রয়েছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে। তাই এ দেশকে বলা হয় নদী- মাতৃক দেশ।

বাংলাদেশের নদ-নদী : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা-এই প্রধান তিনটি নদীই বাংলাদেশের । এ ছাড়া ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী এ দেশের ভূ-প্রকৃতি, মানুষের জীবন ও অস্তিত্বের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে প্রবাহিত সব নদ-নদীই আন্তর্জাতিক। অর্থাৎ নদীর উৎস বাংলাদেশের বাইরে। কিন্তু সবগুলো নদীই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কিছু কিছু নদীর উৎপত্তি হিমালয় পর্বত থেকে, কিছু কিছু নদী অ-হিমালীয়। হিমালীয় নদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ্মা, যমুনা। আর অ-হিমালীয় নদীগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী, মেঘনা, মাতামহুরী আর সাঙ্গু উল্লেখযোগ্য। এই প্রধান নদীগুলোর বেশ কিছু শাখা নদী ও উপনদী রয়েছে। যেমন যমুনার একটি শাখা ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান উপনদীগুলো হলো তিস্তা, করতোয়া, ধরলা, আত্রাই ইত্যাদি। পদ্মার প্রধান উপনদীগুলোর মধ্যে মহানন্দা আর পুনর্ভবা উল্লেখযোগ্য। আর শাখা নদীগুলো হলো : আড়িয়াল খাঁ, কুমার, গড়াই ও মাথাভাঙ্গা। অ-হিমালয়ীয় নদীগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী ও মেঘনার উৎপত্তি ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড় থেকে। কর্ণফুলীর উপনদীগুলোর মধ্যে মাইনি, কাসালং, চিংড়ি এবং রানখিয়াং প্রধান। মেঘনার প্রধান উপনদী কংস, সোমেশ্বরী ও গোমতি। আর শাখা নদীর মধ্যে তিতাস ও ডাকাতিয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য নদীগুলোর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, ভৈরব, ধলেশ্বরী, রূপসা, চিত্রা, গোমতি, পুনর্ভবা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

জনজীবনে নদীর ভূমিকা : বাংলার অপরূপ প্রকৃতি আর উর্বর ভূমি অজস্র নদীরই দান। বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ সমভূমি বলা হয়ে থাকে। এই ব-দ্বীপ নদী দ্বারাই সৃষ্ট। নদীতীরে গড়ে উঠেছে বড় বড় নগর ও বন্দর। এদেশের মানুষের খাদ্য, পোশাক সর্বোপরি সংস্কৃতি নদীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশের নদী-তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য শহর, বন্দর ও বাণিজ্য স্থানের মধ্যে রয়েছে বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, গোয়ালন্দ, সিলেট, ভৈরব, চাঁদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, পাবনা, কুষ্টিয়া, খুলনা, মংলা, চট্টগ্রাম, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, লামা প্রভৃতি। নদীর জল একদিকে বাংলার মাটিকে সরস ও উর্বর করেছে, সেই সাথে মাটির নিচের জলাধার রেখে ভরপুর করে। বৃষ্টি আর নদীর জলেই বাংলার প্রকৃতি এতো সবুজ এতো সজীব। নদীর জল থেকেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানীয় জল তৈরি করা হয়। নদীর দুরন্ত গতিপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ যা ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন অচল। চাষাবাদের জলেরও অনেকটাই আমরা পাই নদী থেকে। এ দেশের মৎস সম্পদের অন্যতম প্রধান উৎস নদী। আর বাংলা সাহিত্যে গল্প-উপন্যাস, কবিতা আর গানে এক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নদী। তাই বলা চলে, বাঙালির জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে এ দেশের নদ-নদী।

নদী যখন দুঃখের কারণ : শ্যাম-স্নিগ্ধ নদী কখনো কখনো দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভাঙনের বিধ্বংসী বিপর্যয় নিয়ে গ্রাস করে মানুষের ভিটেমাটি। কখনো আবার প্রবল গতিতে ভয়ংকর মূর্তিতে এগিয়ে চলে। ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম, জনপদ। দেখা দেয় বন্যা। বন্যার ভয়াবহতায় অনেক প্রাণহানী ঘটে। অনেকে সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রয়োজন ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়ানো এবং নদীতীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি।

নদী দূষণ : বাংলাদেশের শহরের কোলঘেঁষা বেশ কিছু নদী বর্তমানে মারাত্মক দূষণের শিকার। শহরের ময়লা আবর্জনা, শিল্পবর্জ্য, বসতবাড়ির আবর্জনা ইত্যাদি প্রতিনিয়ত নদীগুলোকে বিষাক্ত বর্জ্যের বহমান আধারে পরিণত করে চলেছে। তার ওপর রয়েছে নদীতীরে অবৈধ স্থাপনা। এতে নদীগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং বিপন্ন হতে চলেছে নদীর মাছ ও অন্যান্য জলজ সম্পদ। সর্বোপরি নদী নিজস্ব নাব্যতা হারাচ্ছে। এ ধরনের দূষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জনসচেতনতা।

উপসংহার : বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো স্নেহময়ী মায়ের মতোই। নদীর অকৃত্রিম ভালোবাসার দানে এ দেশ পরিপূর্ণ। ‘মাছে-ভাতে’ বাঙালি বলে যে কথাটি রয়েছে তা-ও এই নদীর দানেই। তাই এইসব নদীর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। কেননা নদী বিপর্যস্ত হলে বাংলার প্রকৃতিও বিপর্যস্ত হবে। আর এই নিষ্ঠুর প্রভাব পড়বে এ দেশের মানুষের ওপর।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ   বাংলাদেশের নদ-নদী - প্রবন্ধ রচনা 

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম  বাংলাদেশের নদ-নদী - প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই  বাংলাদেশের নদ-নদী - প্রবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url