অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

 অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধ্যয়ন এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে একটা আত্মিক মিল রয়েছে। ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলে নৈরাজ্য আর নিরাশার মধ্যেও আশার আলো জ্বলবেই। আর অধ্যবসায়ের সাথে যদি মেধার যোগ ঘটে তবে তো কথাই নেই। অনেক মেধাবী বিদ্যার্থী শুধুমাত্র অলসতা আর অমনোযোগিতার জন্যে জীবনে সফলতা পায় না। মেধার চরম অবমাননা ঘটে। ব্যক্তিজীবনে তো বটেই, দেশ ও জাতির জন্যেও এ কম ক্ষতি নয়।

অধ্যবসায়

সাধনা আর পরিশ্রম ছাড়া কখনোই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানো যায় না। আর এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে নিরন্তর নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টারই অন্য নাম অধ্যবসায়। সংকল্পে অটল থেকে, সব বাধার সাথে লড়াই করে, কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মধ্য দিয়ে সাফল্য লাভ করাচরিত্রের এই গুণটিই অধ্যবসায়। পাশাপাশি উদ্যম, উদ্যোগ, নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা আর আন্তরিকতা অধ্যবসায়কে পরিপূর্ণতা দেয় ।
মানব সভ্যতার মূলে রয়েছে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা। প্রকৃতির কোলে যে মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল অপরিচিত প্রতিকূল পরিবেশে নিতান্ত অসহায়ভাবে সেই মানুষই মাটিতে, পানিতে, আকাশে বিরুদ্ধ শক্তিকে মোকাবেলা করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। নিজের চেষ্টাতেই অনাবাদী মাটি আবাদ করে ফলিয়েছে ফসল, আগুনের ব্যবহার শিখে তাকে নিজের ভৃত্যে পরিণত করেছে। প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়ে সাগর ভরাট করে নগর গড়েছে, মরুভূমিকে করেছে মরূদ্যান। এভাবে আদিম গুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, শিল্প-সংস্কৃতিপ্রতিটি শাখায় মানুষের এই যে অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যোগ আর নিরবিচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা। জীবনের পথ পরিক্রমায় নানারকম সমস্যার মোকাবেলা করতে পারা যায় অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। সমাজ বদলের বা পরিবর্তনের জন্যে যেসব আন্দোলন হয়েছে তার পেছনে রয়েছে অধ্যবসায়। সকল ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়কে একটি বিশেষ চারিত্রিক গুণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিশ্বাস, মেধা, সুযোগ কোনো কিছুই চূড়ান্ত সার্থকতা এনে দিতে পারে না যদি না তাদের যথার্থ প্রয়োগে অধ্যবসায়কেই মুখ্য করে তোলা হয়। সংসারে প্রতিটি মানুষকে তার জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে অসংখ্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়। নিজেকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে এবং দেশ, জাতি ও বৃহত্তর মানবসমাজের জন্যে তাকে

কিছু-না-কিছু অবদান রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবন-সংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। অধ্যবসায়ী ব্যক্তিই মানব জাতির জন্যে কোনো-না-কোনো ভাবে অবদান রাখতে পারে। অধ্যবসায়ী যে নয়, মনের দিক থেকে সে পঙ্গু। সকল বাধাবিঘ্ন, ব্যর্থতাকে উপেক্ষা করে দৃঢ় মনোবল ও উদ্যম নিয়ে যে অগ্রসর হতে পারে না, তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়।
অনেকে প্রতিভাকে সফলতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ভুল করেন। কোনো প্রতিভাবান ব্যক্তি প্রতিভা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকলে কখনোই পরিচিতি পাবেন না। বরং অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই ব্যক্তি প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্যে তাই প্রয়োজন অধ্যবসায়ের। অধ্যবসায়ী মানুষ আত্মবিশ্বাসী হন। আর আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তির স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে সৎ ও মহিমান্বিত।
অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধ্যয়ন এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে একটা আত্মিক মিল রয়েছে। ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলে নৈরাজ্য আর নিরাশার মধ্যেও আশার আলো জ্বলবেই। আর অধ্যবসায়ের সাথে যদি মেধার যোগ ঘটে তবে তো কথাই নেই। অনেক মেধাবী বিদ্যার্থী শুধুমাত্র অলসতা আর অমনোযোগিতার জন্যে জীবনে সফলতা পায় না। মেধার চরম অবমাননা ঘটে। ব্যক্তিজীবনে তো বটেই, দেশ ও জাতির জন্যেও এ কম ক্ষতি নয়।
জগতে যাঁরা মানবজাতির জন্যে মহৎ অবদান রেখে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা কুড়িয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে তার দৃষ্টান্ত। কী অসাধ্যই না সাধন করেছেন তাঁরা! মহাকবি ফিরদৌসি দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে রচনা করেছেন অমর মহাকাব্য শাহনামা'জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশ বিশ বছরের একক প্রচেষ্টায় রচনা করেন পঞ্চাশ হাজারের বেশি শব্দ সংবলিত বাংলা ভাষার অভিধান। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই পুরোপুরি নিজের চেষ্টায় ও সাধনায় দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে প্রায় দু'হাজার প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেন খ্যাতনামা সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। এর ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রায় চারশ বছরের ইতিহাসের অজানা অধ্যায় উদ্ঘাটিত হয়। কবি ভার্জিল ইনিডমহাকাব্য রচনা করেন এগারো বছর ধরে। ইংরেজ প্রাবন্ধিক, ঐতিহাসিক ও দার্শনিক টমাস কার্লাইল ৩৯ বছর বয়সে একনিষ্ঠ শ্রমে রচনা করেছিলেন ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস। গ্রন্থের প্রথম খণ্ডটি লেখা শেষ হলে প্রকাশকের নির্দেশে সেটি তিনি পড়তে দেন জন স্টুয়ার্ট মিলকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য কালাইলের। মিলের এক পরিচারিকার কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় প্রথম খণ্ডের সমগ্র পাণ্ডুলিপি আগুনে পুড়ে যায়। কিন্তু তাতে দমে যাননি অধ্যবসায়ী কার্লাইল। আবার নতুন করে তৈরি করেন পুরো পাণ্ডুলিপি। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস পরপর ছয়বার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েও হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছিলেন। নিউটন নিজেই স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম। কথিত আছে, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলতেন, তাঁর অভিধানে অসম্ভব' শব্দটির স্থান নেই।
তাই জীবনে সফলতার জন্যে অধ্যবসায় নিঃসন্দেহে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর অধ্যবসায়ী হতে হলে অসহিষ্ণু হলে চলবে না। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতাকে অর্জন করা যেমন সম্ভব তেমনি যোগ্যতার বলে অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাওয়াও বিচিত্র নয়। এক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে জরুরি তা হলো নিজের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা। চারিত্রিক দৃঢ়তা অধ্যবসায়ী ব্যক্তিকে যে-কোনো কাজে অনেক বেশি আগ্রহী করে তোলে। এতে মানবীয় সৎ গুণাবলি বিকাশের পথ প্রশস্ত হয়।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বের কথা না বললেই নয়। সামগ্রিকভাবে একটি জাতির সগৌরব প্রতিষ্ঠার জন্যে সকল নাগরিকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। পৃথিবীর বুকে তখনই মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব যখন জাতীয় উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে সবাই সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করবে। আবার ব্যক্তিজীবনের অধ্যবসায়ের প্রভাব জাতীয় জীবনেও পড়ে। তাই জাতির বৃহত্তর কল্যাণে অধ্যবসায়ী ব্যক্তির গুরুত্ব অনেকখানি। নিজের বলিষ্ঠ সাধনাই অধ্যবসায়ী ব্যক্তিকে সাফল্যের পথ দেখায়। অধ্যবসায়ের ফলে অনেক প্রতিকূলতা কেটে যায়, জীবনের পথ হয়ে ওঠে মসৃণ।
জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে গৌরবান্বিত করার জন্যে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। লক্ষ্যে পৌঁছানোর দুরন্ত প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে বলেই কোনো পিছুটান, নিন্দা কিংবা অন্য কিছু দ্বারা প্রভাবিত হয় না অধ্যবসায়ী ব্যক্তি। মনে রাখতে হবে,

ব্যর্থতাই জীবনে সাফল্যের সোপান। সকল প্রতিকূলতা ও ব্যর্থতার মধ্যেও আশার আলো খুঁজে পাওয়া যাবে, যদি থাকে দৃঢ় মনোবল ও উদ্যম। এই মনোবল আর উদ্যম মানুষকে অধ্যবসায়ী করে তোলে। আর অধ্যবসায়ী মানুষই একসময়-না-একসময় সাফল্য ছিনিয়ে আনে। মানুষের জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। প্রতিটি মানুষের উচিত এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া। আর তাহলেই কী ব্যক্তিগত জীবনে, কী জাতীয় জীবনে, কী বিশ্বসভায় মানুষ আরোও বেশি অবদান রাখতে পারবে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা 

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

,অধ্যবসায় রচনা,অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট,অধ্যবসায়,রচনা অধ্যবসায়,অধ্যবসায় কি,অধ্যবসায় রচনা ২০০ শব্দ,অধ্যবসায় রচনা class 7,অধ্যবসায় রচনা class 6,অধ্যবসায় রচনা class 8,অধ্যবসায় নিয়ে উক্তি,অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট,অধ্যবসায় রচনা ক্লাস ৫,অধ্যবসায় রচনা ৩০ পয়েন্ট,অধ্যবসায় রচনা class 4,বাংলা রচনা অধ্যবসায়,অধ্যবসায় রচনা সহজ,প্রবন্ধ রচনা অধ্যবসায়,অধ্যবসায় মানে কি,অধ্যবসায় অর্থ কি,অধ্যবসায় অনুচ্ছেদ রচনা,অধ্যবসায় রচনা ১৫ পয়েন্ট,অধ্যবসায় রচনার ২০ পয়েন্ট,অধ্যবসায় রচনা ১৫০ শব্দ,অধ্যবসায় meaning in english,অধ্যবসায় রচনা pdf,অধ্যবসায় ও সফলতা,অধ্যবসায় রচনা class 5,অধ্যবসায় অর্থ,অধ্যবসায় অনুচ্ছেদ,অধ্যবসায় প্রবন্ধ রচনা,অধ্যবসায় রচনা class 10,অধ্যবসায় রচনা ক্লাস ৮,অধ্যবসায় ও প্রতিভা,অধ্যবসায় রচনা ক্লাস ১০,অধ্যবসায় রচনার 20 পয়েন্ট,অধ্যবসায় রচনা class 9,অধ্যবসায় ইংরেজি কি,অধ্যবসায় অনুচ্ছেদ class 8,অধ্যবসায় রচনা class 3,অধ্যবসায় রচনা ২৫ পয়েন্ট,ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়,অনুচ্ছেদ অধ্যবসায়,অধ্যবসায় রচনা hsc,অধ্যবসায় শব্দের অর্থ কি,অধ্যবসায় রচনা ক্লাস ৭,অধ্যবসায় রচনা ক্লাস ৯,অধ্যবসায় রচনা উক্তি,অধ্যবসায় নিয়ে কবিতা,অধ্যবসায় in english,অধ্যবসায় রচনার কবিতা,অধ্যবসায় রচনা ছোট,অধ্যবসায় রচনা ssc,অধ্যবসায় রচনার পয়েন্ট,অধ্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি,অধ্যবসায়ের,অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত,অধ্যবসায় রচনার উক্তি,অধ্যবসায় উন্নতির সোপান,অধ্যবসায় কাকে বলে,অধ্যবসায় english meaning,,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url