নদীতীরে সূর্যাস্ত - প্রবন্ধ রচনা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

 গিয়েছিলাম আলমডাঙাআমার মামার সাথে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। ছায়া সুনিবিড় ছোট্ট শান্ত গ্রামযেন শিল্পীর নিপুণ তুলির আঁচড়। গ্রামের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে শান্ত গ্রামের মতোই শান্ত নদীটি।
দুপুরে দারুণ ভূরিভোজ সেরে একচোট ঘুমিয়ে নিলাম। বিকেলে বেরিয়ে পড়লাম গ্রামের পথে। গ্রামের মেঠো পথ ধরে একসময় চলে এলাম আশ্চর্য সুন্দর নদীটার কাছে। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। নদীতীরে ফুটে রয়েছে অসংখ্য কাশফুল। শেষ বিকেলের সূর্যের সোনালি আলোর ছোঁয়ায় ধবধবে সাদা ফুলগুলো দেখে মনে হচ্ছিলমাথায় যেন সোনার মুকুট পরেছে ওরা।

নদীতীরে সূর্যাস্ত

গিয়েছিলাম আলমডাঙা, আমার মামার সাথে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। ছায়া সুনিবিড় ছোট্ট শান্ত গ্রামযেন শিল্পীর নিপুণ তুলির আঁচড়। গ্রামের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে শান্ত গ্রামের মতোই শান্ত নদীটি।
দুপুরে দারুণ ভূরিভোজ সেরে একচোট ঘুমিয়ে নিলাম। বিকেলে বেরিয়ে পড়লাম গ্রামের পথে। গ্রামের মেঠো পথ ধরে একসময় চলে এলাম আশ্চর্য সুন্দর নদীটার কাছে। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। নদীতীরে ফুটে রয়েছে অসংখ্য কাশফুল। শেষ বিকেলের সূর্যের সোনালি আলোর ছোঁয়ায় ধবধবে সাদা ফুলগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, মাথায় যেন সোনার মুকুট পরেছে ওরা।
শেষ বিকেলের আলো মেখে পৃথিবী যেন ক্লান্ত, অবসন্ন। অল্প হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে নদীর জল। মধ্যাহ্নের তীব্র রুক্ষ তেজ মিলিয়ে এল বিকেলের নিবিড় শান্ত প্রশান্তিতে। মনে হলো, পৃথিবী যেন এখন একটু বিশ্রাম খুঁজছে। পাখিরা নীড়ে ফিরছে, তাদের ডানায় সোনালি আলোর পরশ।
এই নদীর জলটা অদ্ভুত নীল। শরতের নীলাকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ। তারই ছায়া পড়েছে নীল জলে; সেই সাথে রক্তলাল সূর্যের রক্তিম আভাযেন এক মায়াবী ইন্দ্রজালযেন চারিদিকে ঝরে পড়ছে রাশি রাশি সোনা।
চারিদিকে অপরূপ কনে দেখা আলো। সেই আলোয় অবগাহন করে অপার বিস্ময়ে আমি দেখছি সৃষ্টির অপূর্ব রূপ। সারাদিনের দীপ্তি ছড়ানো প্রবল তেজি সূর্য বিদায় বেলায় যেন লজ্জাবনত, কোমল। ভয়ংকর সুন্দরের মাঝেও যে কোমলতা লুকিয়ে থাকে এ যেন তারই প্রতিরূপ।
নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে দু-একটা পালতোলা নৌকা। দূরের নৌকো থেকে ভেসে আসছে মাঝির কণ্ঠের ভাটিয়ালি গান—'মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে, আমি আর বাইতে পারলাম না।' দূরের মেঠো পথ দিয়ে এঁকেবেঁকে চলছে গরুর গাড়ি, হাট থেকে ফিরছে হাটুরে। কিন্তু সবাই কেমন চুপচাপ, সবার মধ্যেই যেন ঘরে ফেরার তাড়া। সন্ধ্যার এই সোনালি আবিরমাখা মায়াময় মুহূর্তে সবাই যেন মৌনী তাপস। শুধু পাখিদের কাকলি আর দূরে ক্ষীণ একটা যান্ত্রিক আওয়াজ পাওয়া যায়। মনে হয় অনেক দূরের রাস্তায় চলাচলকারী কোনো গাড়ির শব্দ ।
সূর্য অস্ত যায় যায়। যাবার আগে শেষবারের মতো সূর্য যেন পৃথিবীর বুকে পাঠিয়ে দিচ্ছে কিছু রক্তিম রশ্মি। মনে হয়, এই নদী আর দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ একটা মঞ্চ। সূর্য দূর থেকে তার ওপর আলোকসম্পাত করছে, পালন করছে খেয়ালি অথচ নিপুণ এক কোরিওগ্রাফারের ভূমিকা। দূরের গাছপালাগুলোর মধ্যে ঝির ঝির করে বইছে শেষ বিকেলের হাওয়ানারকেল গাছগুলোর পেছনকার আকাশ হয়ে উঠল সোনালি। শেষ বিকেলের আলোর অপূর্ব রূচ্ছটা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। এত সুন্দর! এত অপূর্ব! এ সৌন্দর্যকে ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই।
কনে দেখা সোনালি আলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর রঙ এখন ধূসর। সূর্য যেন কিছুটা ম্লান। ধীরে ধীরে আলো কমে আসছে। আর একটু পরেই নদীর জলে টুপ করে ডুবে যাবে সূর্যটা। এমনি এক সন্ধ্যায় বুঝি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন :
সন্ধ্যা হয়ে আসে,
সোনা-মিশেল ধূসর আলো ঘিরল চারিপাশে।
নৌকাখানা বাঁধা আমার মধ্যিখানের গাঙে;
অরবির কাছে নয়ন কী যেন রঙ মাঙে।
সূর্যটাকে এখন পরিপূর্ণ রক্তিম চাঁদ বলে ভ্রম হয়। পাখিদের কাকলি থেমে গেছে। অসীম আকাশের সীমানায় যে যার নীড়ের খোঁজে উড়ে চলেছে। তাদের ডানায় ঠিকরে পড়েছে ডুবন্ত সূর্যের সোনালি ছটা। নদীর জলে রক্তিম সূর্যের প্রতিবিম্ব এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে অনেক দূরে। চেনা পৃথিবীটাকে মনে হচ্ছে অনেক বেশি অচেনা। আমার মনে হলো, আজ, এই প্রথম বুঝি পৃথিবীর বুকে সূর্যাস্তের ক্ষণটি এল। আলোর সঙ্গে আকাশ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আমার মনে পড়ে গেল, রবি ঠাকুরের কবিতার আরও কয়েকটি লাইন :

আলোর সঙ্গে আকাশ যেথায়
এক হয়ে যায় মিলে
শুভ্রে এবং নীলে
তীর্থ আমার জেনেছি সেইখানে
অতল নীরবতার মাঝে অবগাহন স্নানে।
একসময় নদীর জলে হারিয়ে গেল সূর্যটা। নেমে এল সন্ধ্যা। পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিল কোলাহলমুখর একটি দিন । ঝোপ-ঝাড় থেকে লতাপাতার বুনো গন্ধ ভেসে আসছে; ভেসে আসছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। দাঁড় টেনে টেনে এই মাত্র ঘাটে ভিড়ল একটা নৌকা। পশ্চিম আকাশটা এখনো নীল হয়ে আছে। নদীর পাড়ে এ এক আশ্চর্য সন্ধ্যা। চারপাশে আলো-আঁধারি পরিবেশ। দূরের ধান খেত, আরও দূরের গাছপালা মিলিয়ে যাচ্ছে আবছা অন্ধকারে । আকাশ যেন দূরের অন্ধকারের আঁচল বিছিয়ে এগিয়ে আসছে নদীর ওপর দিয়ে। আঁধারের কালো পর্দা ঠেলে আকাশ আর প্রকৃতির এই এক হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা অপূর্ব। প্রকৃতির এক বিশাল, প্রশান্ত ও অবাধ বিস্তারের মধ্যে স্তব্ধ নীরবতার এ এক অদ্ভুত অনুভব। ক্রমে আঁধারে চারপাশ অস্পষ্ট হয়ে এল। নদী আর তটরেখার মধ্যে যে পার্থক্যটুকু ছিল তাও গেল মিলিয়ে। নদীর সেই স্তব্ধ জলের পাশে, প্রকৃতির সেই নীরব শান্ত পটভূমিতে আমার মনে একটু আগে দেখা অপরূপ সৌন্দর্যটুকু হারিয়ে ফেলার জন্য এক ধরনের বেদনা অনুভব করলাম। আশ্চর্য এই আলো-আঁধার, এই আকাশ-মাটির মধ্যে রয়েছে কী অপরূপ মায়া, কী গভীর প্রশান্তি, কী অপরিসীম সৌন্দর্য! আজ নদীর পাড়ে এসে সেই সূর্যাস্ত না দেখলে তা কি আমি অনুভব করতে পারতাম! অন্যরকম এক ভালো লাগা নিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম। এবার ফিরতে হবে।
পৃথিবীর বুকে প্রতিদিনই সূর্যোদয় হয়, আসে সূর্যাস্তের ক্ষণ। শহুরে যান্ত্রিকতায় কখনই তা মনে-প্রাণে অবলোকন করার অবকাশ মেলে না। শহরে ইট-কাঠ দালানের ফাঁকে সূর্যাস্ত আর নদীতীরের সূর্যাস্তের মধ্যে যোজন যোজন ফারাক। আজ যেন আমার সামনে উন্মোচিত হলো নতুন এক দিগন্ত। আকাশের লাল রঙটা মিলিয়ে গিয়ে চারিদিকে নেমে এল আঁধার । জোনাকির আলোয় পথ চিনে চিনে বাড়ি ফিরে এলাম। মনের পর্দায় বারবার উঁকি দিতে থাকল একটু আগে দেখা সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্যগুলো ।


আর্টিকেলের শেষকথাঃ  নদীতীরে সূর্যাস্ত - প্রবন্ধ রচনা 

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম নদীতীরে সূর্যাস্ত - প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই নদীতীরে সূর্যাস্ত - প্রবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url