স্বাধীনতা দিবস - রচনা ( ক্লাস 7,8,9,10)

এই স্বাধীনতা দিবস রচনা টি যেকোন ক্লাসের জন্য। যারা ক্লাস ৭ম শ্রেনীতে আছে তাদের জন্যও এই স্বাধীনতা দিবস রচনা টি। আবার ক্লাস দশম শ্রেনীতে আছো তাদের জন্য এই স্বাধীনতা দিবস রচনা । অর্থাৎ ক্লাস ৭ম শ্রেনী থেকে ১০ম দশম শ্রেনী পর্যন্ত সবার প্রযোজ্য এই স্বাধীনতা দিবস রচনা । রচনাটি পড়ার আগে তোমরা রচনা লেখার নিয়ম ও সুচিপত্রটি দেখা নাও।

 স্বাধীনতা দিবস

প্রবন্ধ রচনা - প্রবন্ধ রচনার কৌশল - প্রবন্ধের কাঠামো, প্রবন্ধ রচনার দক্ষতা আসবে যেভাবে

ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমাদের জীবনে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি নব প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণের দিন । ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দেশকে স্বাধীন করার জন্যে বাঙালি নিয়েছিল দৃপ্ত শপথ। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এবং আপন পরিচয় খোঁজার নিমিত্তে সেদিন বাঙালি গর্জে উঠেছিল । দীর্ঘদিনের শোষণ ও নিপীড়ন ভেঙে আবহমানকালের গৌরবময় সাহসিকতার ইতিহাস যেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেদিন এ জাতির ভেতরে। তাই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করে সেদিন বাঙালি অর্জন করেছিল স্বাধীনতার সোনালি সূর্য ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস: বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা দিবস আত্মত্যাগ ও আত্ম-অহংকারের একটি দিন। ১৯৭১ সালের এদিন এদেশের মানুষ পৃথিবীর বুকে নতুন একটি মানচিত্রের সৃষ্টি করে। বাঙালির মুক্তির সমস্ত আকাঙ্ক্ষা সমন্বিত হয়েছিল সেদিন। আকাশের নক্ষত্র রাজির মতো ছোট-বড় হাজারো ঘটনার জন্ম হয়েছিল সেদিন। সমস্ত জাতি যেন একই অঙ্গীকারে শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। রক্তস্নাত হয়ে এ সবুজ-শ্যামল বাংলা অন্যরূপ পেয়েছিল সে সময়। বাঙালির সে ক্ষণের বীরত্বের ইতিহাস চর্চিত হয়েছে বহুভাবে বহুস্থানে। এ ইতিহাস আজন্মকাল ধরে বাঙালির হৃদয়ে জাগরুক থাকবে।

স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি: ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়; তবে সে সময় এই ভূখণ্ডের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। দীর্ঘদিনের ইংরেজ শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার সুবাতাস পাবে— তা ছিল উঠে  অঞ্চলের মানুষের একান্ত প্রত্যাশা কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলেও এ অঞ্চলের মানুষের শোষণমুক্তি ঘটেনি। স্বীয় রাষ্ট্রের অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ।পাকিস্তানিদের প্রকৃত চেহারা উপলব্ধি করে মানুষের মনে ধীরে ধীরে দানা বেঁধে ওঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে  পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালিয়ে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেজন্যে আমরা ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করি। এরপর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি হানাদার।

স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম : স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম একদিনে সংঘটিত হয়নি; বহুদিন ধরে ধীরে ধীরে এ সংগ্রাম মহীরূহ রূপ পেয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সোপান। ইতিহাসবিদদের মতে, ভাষা আন্দোলনেই স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। এরপর ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬দফা প্রণয়ন ও তৎপরবর্তী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান প্রভৃতি ঘটনার মধ্যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন নিহিত ছিল । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এদেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল। কিন্তু শাসকদের চক্রান্তে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনি তারা। সেই প্রবঞ্চনা ও পরবর্তীকালে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যাই বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলনকে চরমতম রূপ দেয়।

স্বাধীনতা অর্জনের মুক্তিযুদ্ধ : স্বাধীনতা অর্জনে এদেশের মানুষ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এদেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে- সম্ভ্রম হারিয়েছেন কয়েক লক্ষ মা-বোন। আলবদর, আলশামস ও তথাকথিত শান্তি কমিটির সদস্যরা পাকিস্তানিদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, তখন দেশীয় এই রাজকারদের তৎপরায় বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে, সম্ভ্রম দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। বহু মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছে এই রাজাকার বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে এই শত্রুদের বিনাশ করে স্বাধীনতা অর্জন করতেই একটি সামরিক পরিকল্পনা করে তৎকালীন (১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে গঠিত হয় অস্থায়ী সরকার) অস্থায়ী সরকার। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন কর্নেল এমএজি ওসমানী। তাঁর নেতৃত্বে এবং বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের মিত্রবাহিনীর তৎপরতায়  সহযোগিতায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদেশ স্বাধীন হয় 

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য : আমাদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের মূল তাৎপর্য হলো— এটি আমাদের ত্যাগ ও মুক্তিসংগ্রামের গৌরবময় একটি দিন। এদিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল; ত্যাগে ও বেদনায় মহীয়ান। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের বঞ্চিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষ মুক্তির নতুন দিশা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে ইতিহাস রচিত হয়েছে তা এদেশের মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে যুগে যুগে প্রেরণা জোগাবে। তাই প্রতিবছর এদিন এলেই বাঙালি নতুন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে উজ্জীবিত হয়।

স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন : স্বাধীনতার মূল অর্থ হলো অধীনতা থেকে মুক্তি; আত্মোন্নয়নের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ লাভ। প্রতিটি স্বাধীনতা দিবস আমাদের জীবনে এনে দেয় নতুনসম্ভাবনা। আমরা নিজেদের ভেতরে স্বাধীনতার স্বাদ কতটা অনুভব করতে সমর্থ হচ্ছি তা মূল্যায়ন করি। স্বাধীনতার সুফল আমরা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারছি কিনা তাও আমরা ভেবে দেখি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের যেমন আশা জাগানোর কিছু দিক রয়েছে, তেমনি অনেক দিক রয়েছে হতাশার। স্বাধীনতার সুফল সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলেই কেবল শহিদদের আত্মত্যাগ সার্থক হতে পারে।

স্বাধীনতার স্বপ্ন ও বর্তমান বাস্তবতা : স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রাষ্ট্র প্রবর্তন করা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবাইকে স্বনির্ভর করাছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই লক্ষ্য নিয়েই দেশ গঠন শুরু করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরবর্তী সময়ে অনেক সরকারই রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তারা কেউই স্বাধীনতার প্রকৃত লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করেনি। আজ সমাজে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। সমাজে এখনো দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে এবং ধনী সৃষ্টি করছে সম্পদের পাহাড়। ফলে অসাম্য দেখা দিয়েছে সমাজের সর্বস্তরে যা আমাদের গভীর এক হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

সমাজ-প্রগতি ও স্বাধীনতা : সমাজের প্রগতিই হলো স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রয়োজন নতুন চেতনা, নতুন আত্মপোলব্ধি, নতুন শপথ। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে হবে উন্নয়নের নতুন মাইলফলক। প্রগতির পথে সমাজকে পরিচালিত করতে স্বাধীনতার মূল স্তম্ভগুলোকে লালন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা হতে হবে। এ পথে সাময়িক ব্যর্থতা পর্যবসিত হলেও তা ভবিষৎকালে স্বাধীনতার বৃহদার্থকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবে।

উপসংহার : মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীনতার অধিকার প্রাপ্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে ও বিশ্বে পরাধীনতাই যেন সবাইকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। আমাদের সমাজেও সুপ্তভাবে এই প্রক্রিয়াটি লক্ষ করা যায়। কিন্তু ভুললে চলবে না আমাদের স্বাধীনতা অনেক রক্তের দামে কেনা; শহিদদের এই পবিত্র রক্তের দায় জাতি হিসেবে আমাদের সবারই। সেই দায় শোধ হতে পারে কেবল স্বাধীনতাকে সবার জন্য ভোগ্য করে তোলার মাধমে। এই প্রত্যয় নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ভবিষত কালের পথে। 

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  স্বাধীনতা দিবস

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম  স্বাধীনতা দিবস রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই  স্বাধীনতা দিবস রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url