আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস - রচনা ( ক্লাস 7,8,9,10)

এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা টি যেকোন ক্লাসের জন্য। যারা ক্লাস ৭ম শ্রেনীতে আছে তাদের জন্যও এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা টি। আবার ক্লাস দশম শ্রেনীতে আছো তাদের জন্য এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা । অর্থাৎ ক্লাস ৭ম শ্রেনী থেকে ১০ম দশম শ্রেনী পর্যন্ত সবার প্রযোজ্য এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা । রচনাটি পড়ার আগে তোমরা রচনা লেখার নিয়ম ও সুচিপত্রটি দেখা নাও।  

 আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

প্রবন্ধ রচনা - প্রবন্ধ রচনার কৌশল - প্রবন্ধের কাঠামো, প্রবন্ধ রচনার দক্ষতা আসবে যেভাবে

ভূমিকা: মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মা ও মাটির মতোই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এ সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। মানুষের পরিচয়ের প্রথম ও প্রধান ধাপ এই মাতৃভাষা। মা ও মাটির সাথে তার যেমন নিবিড় ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, মাতৃভাষার সাথেও থাকে ঠিক তেমন সম্পর্ক। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা । ১৯৫২ সালের একুশে ফ্রেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্যে জীবন দিয়ে বাঙালি বিশ্ব-ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারই স্বীকৃতি পেয়েছি আমরা শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে। সমস্ত বিশ্ব এই দিনটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি: তদানীন্তন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা । উর্দু ছিল মাত্র সাত শতাংশ লোকের মাতৃভাষা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ঘোষণা করে বাংলা নয়, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পাবে উর্দু। বাঙালি দাবি করেছিল, সকল মাতৃভাষাই সমান মর্যাদা লাভের অধিকারী। তাই উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাকেও দিতে হবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কোনোভাবেই তা মেনে নেয়নি। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' স্লোগানে তাই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার ছাত্র-জনতা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। আন্দোলন আরও তীব্র হয়। গর্জে ওঠে সারা বাংলা। আতঙ্কিত সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে শহিদদের স্মরণে প্রতিবছর ২১ ফ্রেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। মাতৃভাষার জন্যে এ ধরনের আত্মত্যাগের নজির পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম। তাই এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা দিতে ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সর্বসম্মতভাবে এক প্রস্তাব গৃহীত হয় ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতির উদ্যোগ: ১৯৯৮ সালে কানাডার প্রবাসীদের সংগঠন ‘মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’-এর উদ্যোগে প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখেন সংগঠনটির দু-জন ব্যক্তিত্ব আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয় এবং ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩১তম সম্মেলনে ২৭টি দেশের সমর্থনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বের ১৮৮টি দেশ শ্রদ্ধার সাথে নিজ নিজ মাতৃভাষার সম্মানে এই দিনটি পালন করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য অনেক। প্রথমত, ছোট-বড় সকল ভাষার প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন । দ্বিতীয়ত, দুর্বল বলে কোনো ভাষার ওপর প্রভুত্ব আরোপ না করা। তৃতীয়ত, ভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা। চতুর্থত, ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া। পঞ্চমত, সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। এর ফলে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ নিজ নিজ ভাষাকে বুকে ধারণ করবে। সেইসাথে অন্য ভাষাকেও দেবে যথাযোগ্য মর্যাদা।

উপসংহার: এভাবেই মহান ভাষা-আন্দোলনের দীর্ঘ ৪৭ বছর পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ভাষা-আন্দোলন বিশেষ মহত্ত্ব পেয়েছে। মূলত এটি বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে যাঁরা মাতৃভাষার জন্যে জীবন দিয়েছেন তাঁদের ত্যাগের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি। আর এই মূল্যায়ন যথার্থতা পাবে জ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে সাধ্যমতো মাতৃভাষা বাংলার প্রয়োগ ঘটালে। নিজ ভাষার প্রতি নিবেদিত প্রাণ হবার পাশাপাশি বিশ্বের সব ভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানোর মধ্যেই নিহিত আছে মহান মাতৃভাষা দিবসের সার্থকতা।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url