শিষ্টাচার - প্রবন্ধ রচনা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

শিষ্টাচার কী : আচরণে ভদ্রতা ও সুরুচিবোধের যৌক্তিক মিলনের নাম শিষ্টাচার। শিষ্টাচার মনের সৌন্দর্যের বাহ্য উপস্থাপনা। তার মার্জিততম প্রকাশ ঘটে সৌন্দর্যবোধের মাধ্যমে। যে মানুষ যত বেশি শিষ্ট তার প্রিয়তাও তত বেশি। আর এই শিষ্টতা তার চরিত্রকেও করে আকর্ষণীয়। মানুষের মাঝে লালিত সুন্দরের প্রকাশ তার চরিত্রে। শিষ্টতা সেই সুন্দরের প্রতিমূর্ত রূপ ।

শিষ্টাচার সম্পর্কে ৫টি বাক্য

  1. শিষ্টাচার হল অন্যদের সাথে আচরণ ও কথা বলার ভদ্র উপায়।
  2. "দয়া করে" এবং "ধন্যবাদ" বলা ভাল আচরণ এবং সম্মান দেখায়।
  3. ভাল আচরণ দেখানোর জন্য উপযুক্ত ভাষা এবং কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
  4. আপনার পালা অপেক্ষা করা এবং অন্যরা যখন কথা বলছে তখন বাধা না দেওয়াও ভাল আচরণ।
  5. ভাল আচরণ মানুষকে মূল্যবান এবং সম্মানিত বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

শিষ্টাচার সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

  1. শিষ্টাচার হল সামাজিক নিয়ম যা আমাদের আচরণকে বিভিন্ন সেটিংয়ে নিয়ন্ত্রণ করে।
  2. ভাল আচরণের মধ্যে অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা, বিবেচনা এবং ভদ্রতা দেখানো জড়িত।
  3. "দয়া করে" এবং "ধন্যবাদ" বলা ভাল আচরণের মৌলিক দিক।
  4. উপযুক্ত ভাষা এবং কণ্ঠস্বরের ব্যবহার ভদ্র আচরণের একটি অপরিহার্য অংশ।
  5. ভাল আচরণের মধ্যে সময়নিষ্ঠ হওয়া এবং অন্যান্য লোকের সময়কে সম্মান করাও জড়িত।
  6. খাবার এবং অন্যদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য খাবারের সময় সঠিক টেবিল আচার ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
  7. ভাল আচরণের মধ্যে ব্যক্তিগত স্থান এবং সীমানা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জড়িত।
  8. অন্যদের জন্য সহানুভূতি এবং উদ্বেগ দেখানো ভাল আচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
  9. অন্যদের সঠিকভাবে সম্বোধন করা, যেমন উপাধি এবং সম্মানের ব্যবহার, ভাল আচরণের লক্ষণ।
  10. ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং সম্প্রদায়ের বোধ গড়ে তুলতে ভাল আচরণ অপরিহার্য।


শিষ্টাচার

শিষ্টাচার কী : আচরণে ভদ্রতা ও সুরুচিবোধের যৌক্তিক মিলনের নাম শিষ্টাচার। শিষ্টাচার মনের সৌন্দর্যের বাহ্য উপস্থাপনা। তার মার্জিততম প্রকাশ ঘটে সৌন্দর্যবোধের মাধ্যমে। যে মানুষ যত বেশি শিষ্ট তার প্রিয়তাও তত বেশি। আর এই শিষ্টতা তার চরিত্রকেও করে আকর্ষণীয়। মানুষের মাঝে লালিত সুন্দরের প্রকাশ তার চরিত্রে। শিষ্টতা সেই সুন্দরের প্রতিমূর্ত রূপ ।
অন্তর্গত মহত্ত্ব মানুষকে উদার করে। আর সেই উদারতা ব্যক্তিকে রূঢ় করে না, তাকে শিষ্ট আর ভদ্র হতে শেখায় । মানুষের মাঝে এই মহত্ত্বের পরিশীলিত প্রকাশই শিষ্টতা। সাধারণভাবে চালচলন, কথাবার্তায় যে ভদ্রতা, শালীনতা আর সৌজন্যের পরিচয় পাওয়া যায় তা-ই শিষ্টতা। শিষ্টাচার ব্যক্তিজীবনের যেমন তেমনি সমাজজীবনেরও গৌরবসূচক
আভরণ।
আচরণে যদি মানুষ শিষ্ট না হয়, ব্যবহারে উগ্রতা যদি পরিহার না করে তবে কখনো শিষ্টাচারী হওয়া সম্ভব নয়। স্বভাবে কৃত্রিমতা পরিহার করতে না পারলে কখনো পবিত্র মনের অধিকারী হওয়া যায় না। মানবিক সত্তা তার সফুরণে চরিত্রের সাধুতাকে অবলম্বন করে, তার প্রকাশ ঘটে শিষ্ট স্বভাবে। ঔদ্ধত্য আর উচ্ছৃঙ্খলতা এখানে পরাজিত হয়। অহংকার অন্যকে ছোট ভাবতে শেখায়। শিষ্টতা বিপরীতভাবে মানুষকে সম্মান করতে শেখায়। কদর্যতা আর অশ্লীলতা শিষ্টাচারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। কাজেই ব্যক্তিকে হতে হয় আচরণে মার্জিত, বক্তব্যে সৎ, সরল আর স্পষ্ট। বিনয় মানুষকে ছোট করে না, বরং পরায় সম্মানের মুকুট। এই বিনয় শিষ্টতার অঙ্গভূষণ।

শিষ্টাচারের গুরুত্ব : আচরণে যে জাতি যত বেশি সভ্য সে জাতি তত বেশি সুশৃঙ্খল ও উন্নত। কেবল পশুপাখির মতো বেড়ে ওঠাই মানুষের লক্ষ্য নয়। আত্মোন্নয়নের পাশাপাশি সমাজ ও জাতীয় জীবনে কোনো-না-কোনো ভাবে অবদান রাখা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। আর তা করতে হলে শিষ্ট আচরণের অনুশীলন ছাড়া বিকল্প নেই। শিষ্টাচারের প্রথম প্রকাশ ঘটে ব্যক্তিস্বভাবে। যা ক্রমাগত ব্যক্তি থেকে আলোর বন্যার মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা সমাজে, রাষ্ট্রে। এর আলোতে উজ্জ্বল ব্যক্তির আত্মিক মুক্তির সাথে যোগ হয় বৈষয়িক অগ্রগতি। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে প্রতিনিয়তই আমাদের সমাজের অপরাপর দশ জনের সাথে যোগাযোগ আর ভাবের আদান-প্রদান করতে হয়। এরই মাঝে শিষ্টজন সহজে সকলের মন জয় করতে পারে। পারস্পরিক সম্প্রীতির জন্যে এর খুবই প্রয়োজন। কেননা সম্প্রীতি না থাকলে হিংসা আর হানাহানি সমাজকে ঠেলে দেয় বিশৃঙ্খলার দিকে।
শিষ্টাচারী ব্যক্তি দরিদ্র হতে পারে, কিন্তু তার সৌজন্যে আর বিনয়ের মাধ্যমে সে সকলের প্রিয়তা অর্জন করে। শিষ্টজন সহজেই অর্জন করেন অন্যের আস্থা। অন্যের সহানুভূতি লাভ করার জন্যে শিষ্টতা উত্তম। তাছাড়া শিষ্টাচারীকে সকলে সম্মানের চোখে দেখে। তাই বলা যায়, সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্যে শিষ্টাচারের বিকল্প নেই। এতে করে আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সকলের আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে আসে সুষম উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি।

শিষ্টাচার ও ছাত্রসমাজ : জ্ঞানার্জনে নিষ্ঠা, অভিনিবেশ আর শৃঙ্খলাবোধের পাশাপাশি শিষ্টাচার অনুশীলন খুবই জরুরি। নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষের জন্যে ছাত্রজীবনেই ব্যবহারে ভব্যতা আর শিষ্টতার সম্মিলনঘটানোর কোনো বিকল্প নেই। কাজেই দেখা যাচ্ছে জ্ঞানের সাথে শিষ্টাচারের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ। ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ ঘটে পোশাক-পরিচ্ছদে। রুচিশীল আর সরল জীবন-যাপনের পাশাপাশি পোশাকের ক্ষেত্রেও সুরুচির পরিচয় থাকা দরকার।

শিষ্টাচার ও সমাজ : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক—প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তা না হলে বিদ্বেষ, হিংসা, হানাহানি আর অশান্তি জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনে। শিষ্টাচার প্রতিষ্ঠায় সমাজ-ব্যবস্থা ও সমাজ-কাঠামোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব প্রদর্শন করা দরকার। কিন্তু তার মানে এই নয় যে যৌক্তিক সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনকে এগিয়ে নিলে শিষ্টাচারী হওয়া যাবে না। সমাজে নিজের অবস্থান সম্পর্কে থাকতে হবে সতর্ক। সামাজিক অবস্থান শিষ্টাচারের মাত্রা নির্ধারণ করে। একইভাবে ক্রোধ আর প্রতিহিংসার মতো চারিত্রিক দোষগুলো অতিক্রমের চেষ্টা থাকতেই হবে। এসব বিপরীতমুখী দিকগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্যে দরকার চারিত্রিক দৃঢ়তা।

শিষ্টাচার ও রাষ্ট্র : জাতীয় জীবনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিষ্টতার প্রকাশ পায় রাষ্ট্র পরিচালনায়, নেতৃত্ব প্রদানকারীদের মধ্যে। এর প্রভাব পড়ে গোটা দেশজুড়ে। আবার আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক বিকাশ ও নিয়ন্ত্রণে কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিষ্টতার বিকল্প নেই। চরম লাভ-লোকসানের ব্যাপার ব্যবসা-বাণিজ্যেও শিষ্টাচারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।


শিষ্টাচার না থাকার কুফল : শিষ্টাচারহীন সমাজ হয় অন্তঃসারশূন্য, বিবেকহীন। সমাজে সৌন্দর্য আর সুকুমার প্রবৃত্তিগুলোর দেখা মেলে না। মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে বিরোধ হয়, দ্বন্দ্বযুদ্ধ হয়। সর্বোপরি মানব সভ্যতা চরম হুমকির মুখোমুখি দাঁড়ায়। শিষ্টাচারহীন মানুষ সবসময় উদ্ধত থাকে। আলাপ-আলোচনায় তার মধ্যে প্রকাশ পায় অমার্জিত ভাব। তার আচরণে প্রাধান্য পায় দুর্ব্যবহার ও দুর্মুখতা ।


শিষ্টাচার অর্জনের উপায় : শিষ্টাচার নিজ থেকে মানব হৃদয়ে জন্ম নেয় না। একে বরণ করে নিতে হয়। এর চর্চা শুরু হয় শিশুকাল থেকেই। তাই শিশু কোন পরিবেশে, কার সাহচর্যে কীভাবে বেড়ে উঠছে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে প্রয়োজন শিক্ষার। কেননা আমৃত্যু চলতে থাকে শিষ্টাচারের অনুশীলন। শিশু পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথী কিংবা প্রতিবেশী যাদের সাহচর্যে থাকে তাদের কাছ থেকেই আচরণ শেখে। তাই সৎসঙ্গ শিষ্টাচারী হতে সাহায্য করে। স্কুল-কলেজেও শিক্ষার্থীরা শিষ্টাচারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। ভালো বইও একজন সৎ অভিভাবকের মতোই শিষ্টাচার শেখাতে পারে।


উপসংহার : শিষ্টাচারের ভিত্তিভূমির ওপর গড়ে ওঠে সৎ চরিত্রের সুরম্য অট্টালিকা। সৎ চরিত্রবান ব্যক্তি সমাজ ও জাতীয় জীবনে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা শিষ্টাচারের অন্তরায়। তা প্রতিনিয়ত মানবিক মূল্যবোধগুলো ধ্বংস করে সমাজকে করে তুলতে পারে নিঃস্ব, রিক্ত ও সর্বস্বান্ত। মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ে আমরা হতে পারি সমস্যা-জর্জরিত। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে সুস্থতা ও সমৃদ্ধি অর্জনে তাই
আমাদের শিষ্টাচারের চর্চা করা উচিত।
[ অনুরূপ রচনা : সৌজন্যবোধ, মানবজীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ।


আর্টিকেলের শেষকথাঃ  শিষ্টাচার - প্রবন্ধ রচনা 

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম শিষ্টাচার - প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই শিষ্টাচার - প্রবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

শিষ্টাচার,শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ,শিষ্টাচার কি,শিষ্টাচার রচনা,শিষ্টাচার অর্থ কি,শিষ্টাচার কাকে বলে,শিষ্টাচার শব্দের অর্থ,শিষ্টাচার নিয়ে উক্তি,শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ রচনা,সরকারি কর্মচারীদের শিষ্টাচার,শিষ্টাচার এবং শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ,শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ রচনা,,


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url