একটি শীতের সকাল - প্রবন্ধ রচনা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

 এই শীতের সকাল অনুচ্ছেদ রচনা টি যেকোন ক্লাসের জন্য। যারা ক্লাস ৭ম শ্রেনীতে আছে তাদের জন্যও এই শীতের সকাল  রচনা টি। আবার ক্লাস দশম শ্রেনীতে আছো তাদের জন্য এই শীতের সকাল অনুচ্ছেদ রচনা । অর্থাৎ ক্লাস ৭ম শ্রেনী থেকে ১০ম দশম শ্রেনী পর্যন্ত সবার প্রযোজ্য এই শীতের সকাল অনুচ্ছেদ রচনা । অনুচ্ছেদ রচনাটি পড়ার আগে তোমরা রচনা লেখার নিয়ম ও সুচিপত্রটি দেখা নাও।

 

শীতের সকাল

কোনো লেখাসে গল্প-উপন্যাস বা প্রবন্ধ কিংবা কোনো কাজসবকিছুরই একটা শুরু থাকে, সূচনা থাকে। তেমনি একটি দিনের শুরু হয় সকাল দিয়ে। একটি সকাল একটি দিনের সূচনা। দিনের এই লগ্নটি ঋতুভেদে বিচিত্র রূপ নিয়ে আসে মানুষের জীবনে। শীতের সকাল আসে কুয়াশার আবরণে আবৃত হয়ে। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে অনন্য হয়েই সে নগর আর গ্রামীণ জীবনে ধরা দেয়।

প্রকৃতির পালাবদলের হাওয়ায় শীত আসে রিক্ততার আর শূন্যতার ডালি নিয়ে। ফসলহীন মাঠ, পাতাঝরা শূন্য গাছ প্রকৃতি যেন বৈরাগ্যের বসন পরেছে। আর শীতের সকাল পাতলা কুয়াশার চাদর পরে আরও বিষণ্ন করে তোলে পরিবেশ। সময় থমকে দাঁড়ায়। কতটা বেলা হলো বোঝার উপায় নেই। কেননা সূর্যের দেখা নেই যতদূর দৃষ্টি যায় ধোঁয়াটে আবছা অন্ধকার। মনে হয় রাত বুঝি-বা শেষ হয়নি এখনো। সচ্ছল আরামপ্রিয় মানুষ লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে নরম বিছানার উষ্ণতায়। অপেক্ষাকখন কুয়াশা কেটে গিয়ে সূর্য উঠবে, শুরু হবে জীবনের প্রাত্যহিকতা।

গ্রামের সাধারণ মানুষ যারা মাঠে কাজ করে, এই শীতের সকালেই তাদের বেরিয়ে পড়তে হয় জীবনের তাগিদে। কানে-মাথায় গামছা বেঁধে পাতলা চাদর গায়ে দিয়ে নগ্ন পায়ে তাদের মাঠে যেতে হয়। হেমন্তে যে ধান পেকেছে তা ঘরে তুলবার সময় এখন। সোনালি ধান, সোনালি ফসলসোনালি আশা। সারা বছরের কষ্টের প্রাপ্তি। তাই শীতের কষ্টকে তুচ্ছ করে কুয়াশা কেটে কেটে মাঠের দিকে যায় সে। কেউ কেউ আবার সূর্য ওঠার প্রতীক্ষায় থাকে। কখন রোদের উষ্ণতা গায়ে মেখে ফসল কেটে আনবে সেই প্রতীক্ষা করে। কেননা মাঠে তেমন কোনো কাজ নেই, নেই হালচাষের কিংবা বীজ বোনার ঝক্কি। সময় গ্রামের অনেকে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে বসে উত্তাপ নেয়। গ্রামের বৌ-ঝিরা সময় নানারকম পিঠেপুলি তৈরি করে, পাশাপাশি চলে হালকা গল্প-গুজব। আর শীতের সকালে গাছ থেকে সদ্য নামানো ঠান্ডা খেজুরের রসের আবেদন তো একেবারেই আলাদা। ছোট শিশুরা ঘুম ঘুম চোখে উঠে আসে। তাদের শরীর প্যাঁচানো থাকে বড় চাদরে। গুটি গুটি পায়ে তারাও এসে বসে চুলোর ধারে। একসময় কুয়াশা কেটে যায়, গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় সূর্য। আগুনের উত্তাপ ছেড়ে এবার সূর্যের উত্তাপ নেওয়ার পালা। যেখানেই রোদ দেখা যায় শিশুর দল সেখানেই দৌড়ে যায়। কাঁচা সোনা রোদে বসে ঘরে ঘরে চলে পিঠে খাবার ধুম। কেউ কেউ মরিচ আর পেঁয়াজ ডলে পান্তা ভাত খায়। শীতের সকালে সূর্য সুখকর উষ্ণতা নিয়ে আসে। শিশিরভেজা মেঠো পথ ধরে কাজে যায়। কখনও কখনও কৃষাণী খেতে যায়। কৃষাণ তার ধান কাটায় ব্যস্ত। কৃষাণীর হাতে থাকে কখনো পান্তা, কখনও মুড়ি আর গুড়। বাঁধাকপি কিংবা ফুলকপির আল ধরে, হলুদ সরষে খেতের পাশ দিয়ে, মটরশুঁটির ভেজা কচি ডগা বাঁচিয়ে রোদের আরাম চেখে চেখে এগিয়ে যায় সে। শীতকালীন ছুটির কারণে ছেলেমেয়েদের থাকে অফুরন্ত অবসর। কেবল খেলা আর আনন্দ। প্রায়ই তারা বনভোজনে মাতে। সকাল থেকেই চলে তার আয়োজন। ততক্ষণে হয়তো পুরোপুরি কেটে যায় কুয়াশা। চারদিকে ঝলমলে আলো। গাছের পাতায় শিশিরের শেষ বিন্দুটুকু শুকিয়ে যাবার আগে হঠাৎ মুক্তোর মতো ঝলসে ওঠে। বাতাসে ভেসে বেড়ায় খেজুরের রসে তৈরি পায়েস কিংবা গুড়ের মিষ্টি ঘ্রাণ। ঢেঁকিঘরে ছন্দময় তাল ওঠেধুপ, ধুপ। হালকা হিমেল বাতাস বয়। সোনালি ফসল বোঝাই গরুর গাড়ি গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে এগিয়ে যায়। কৃষকের মনে দারুণ আনন্দ। ঘর তার ভরে উঠবে সোনালি ধানে। কয়েক মাসের জন্যে একেবারে নিশ্চিন্ত থাকা। শীত কাটানোর জন্যে সে চড়া গলায় গান ধরে :

ওকি গাড়িয়াল ভাই-

কত রব আমি পন্থের পানে চাইয়া রে।...

শহুরে জীবনে শীতের সকাল হুট করেই চলে যায়।

উঁচু তলায় যাদের বসবাস তাদের কাছে শীত-সকালের কোনো আবেদন নেই বললেই চলে। ইটের পর ইট গেঁথে তৈরি কৃত্রিমতায় শীতের সকালকে উপভোগ করা যায় না। অফিসমুখী লোকজন বেরুবার আগে আগে বিছানা ছাড়ে। একটুখানি কুয়াশা দেখা আর গরম চা কিংবা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজে চোখ বুলানো। তারপরই সারাদিনের জন্যে কর্মব্যস্ততায় ডুবে যাওয়া। কিন্তু শহরেও শীত নামে, কুয়াশাঘেরা শীতের সকাল আসে। থাকে না কেবল শিশিরভেজা মেঠো পথ, কাঁচা রস, পিঠেপুলি আর ভাটিয়ালি সুর।

শহরে শীতের সকালে কুয়াশায় অনেক সময় বাড়িঘর পথঘাট আচ্ছন্ন হয়ে যায়। দূরের সুউচ্চ দালানগুলো স্পষ্ট দেখা যায় না। দিন মজুরেরা এই সকালেই কাজের আশায় বেরিয়ে পড়ে। কদাচিৎ কাঁধে হাঁড়ি নিয়ে খেজুরের রস ফেরি করে ফেরিওয়ালা। রাস্তার পাশে স্টোভ জ্বালিয়ে তৈরি হয় ভাপা পিঠা। দু'টাকা তিন টাকা দামে সেসব কিনে নেয় নিম্ন আয়ের মানুষেরা। পিঠে বানানোর সময় বাজে না কেবল রেশমি চুড়ির রিনিক ঝিনিক। কারণ, শহরের রাস্তার পাশে যারা এসব পিঠে তৈরি করে তাদের অধিকাংশই পুরুষ। খুব সকালে রাস্তায় যানবাহন কম চলে। প্রয়োজনে ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলে।

নার্সারি, লন, কিংবা ছাদের টবে গাঁদা, ডালিয়া, কসমস ফুলসহ নানান জাতের শীতের ফুল ফোটে। পরে কুয়াশা কাটিয়ে যখন রোদ ওঠে তখন এসব ফুলের ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দু হিরের দ্যুতি ছড়ায়। স্বাস্থ্য- সচেতন লোকেরা প্রাতঃকালীন ভ্রমণে বের হয়। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা শীতের অতিথি পাখিরা ঢাকা চিড়িয়াখানার লেক- ঝাঁক বেঁধে ভেসে বেড়ায়। ফুটপাত, বাসটার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশনে ছিন্নমূল, ভাসমান মানুষের দল তখনও ঘুমিয়ে। একসময় কুয়াশা কাটলে রোদ ওঠে। কোলাহল বাড়ে। রিকশার টুংটাং, টেম্পু, বাস, ট্রাকের হর্ন সকালের স্তব্ধতা ছিন্ন করে দেয়। ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট তখন কিছুটা হলেও লাঘব হয় রোদের উত্তাপ পেয়ে। সকাল থেকেই বাজার বসে। এছাড়া ঠেলাগাড়িতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শিম ইত্যাদি বিভিন্ন শীতের সবজি নিয়ে শহরের অলিতে-গলিতে ঠেলাওয়ালা হাঁকে। শীতের যে-কোনো ছুটির সকালে শহুরে সামর্থ্যবান নাগরিক সারাদিনের জন্যে বেড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়াশাময় যান্ত্রিক নগরকে পেছনে ফেলে তাঁরা খানিকটা নির্মল বাতাসের আস্বাদ আনন্দ পেতে চায়।

শীতের সকাল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে মানব মনের ওপর প্রভাব ফেলে। গ্রাম আর শহরভেদে ভিন্ন আমেজে তা মানুষের মনের আঙিনায় ধরা দেয়। তবে কথা ঠিক, দু'পরিবেশেই শীতের সকাল আসে কোলাহলহীনতা নিয়ে। গ্রামের প্রকৃতিতে শীত তার আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল থাকে।

শহরে শীত খানিকটা অবগুণ্ঠিত। তারপরও শীত-সকালের আবেদন কারো কাছেই নিতান্ত তুচ্ছ নয়। শীতের সকালে কাজের চাপ থেকে দূরে থেকে মানুষ একান্তে আনন্দ উপভোগ করে। এমন অবসন্ন কুয়াশা কিংবা মায়াময় নরম রোদের আমেজ আর কি কখনও পাই আমরা! পিঠেপুলি আর ঠান্ডা রস খাবার এমন মোক্ষম সময় কেবল শীতের সকালই আমাদের দিতে পারে। কুয়াশার চাদর পরে আমাদের সামনে হাজির হয় কেবল শীতের সকাল। শস্যহীন মাঠ আর পাতাঝরা গাছের মলিনতা থাকলেও ঘর ভরা সোনার ফসলের পূর্ণতা মানুষের মনে অনাবিল আনন্দের পরশ বুলিয়ে দেয়। তবে শীতের সকালের স্থায়িত্ব ক্ষণিকের। অল্প সময়ের জন্যে এসে মানুষের মনে তার পরশ বুলিয়ে যায়, রেখে যায় কোমল কঠিন স্পর্শ। তাই শীত-সকাল বাঙালির জীবনে স্মৃতিময় হয়ে থাকে।


আর্টিকেলের শেষকথাঃ শীতের সকাল অনুচ্ছেদ রচনা

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম শীতের সকাল অনুচ্ছেদ রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই শীতের সকাল অনুচ্ছেদ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

একটি শীতের সকাল প্রবন্ধ রচনা,একটি শীতের সকালের অভিজ্ঞতা,শীতের সকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য,describe a cold winter morning you remember,শীতের সকাল রচনা,একটি শীতের সকাল রচনা,একটি শীতের সকাল,শীতের সকাল প্রবন্ধ রচনা,শীতের সকাল অনুচ্ছেদ ২য় শ্রেণী,একটি শীতের সকাল গল্প,সকাল দিয়ে বাক্য রচনা,শীতের সকাল রচনা ২য় শ্রেণী,একটি শীতের সকাল রচনা class 4,ফেরিওয়ালা অনুচ্ছেদ class 6,সকাল বেলা অনুচ্ছেদ,শীতের সকাল রচনা ছোট,শীতের সকাল প্রবন্ধ,শীতের দুপুর রচনা,winter morning drawing of winter season in village,essay on a cold winter morning,winter vacation essay for class 1,a cold winter morning essay,winter vacation paragraph for class 1,shiter shokal rachana,শীতের সকাল অনুচ্ছেদ রচনা,একটি শীতের সকালের অভিজ্ঞতা রচনা,শীতের সকাল রচনা pdf,শীতের সকাল রচনা class 4,শীতের সকালের গ্রামের দৃশ্য আঁকা,রচনা শীতের সকাল,শীতের সকালের ছবি আঁকা,গরুর রচনা class 3,শীতের সকাল ছবি আঁকা,ফেরিওয়ালা অনুচ্ছেদ,অনুচ্ছেদ সকাল বেলা,বাক্য রচনা,চাইয়া পিঠা,morning sentence for class 1,during winter morning people do stand in the sun because,a day in winter,paragraph winter vacation essay,essay on a winter morning,essay writing for class 11,winter vacation essay for class 9,ekti shiter shokal,শীতের সকাল অনুচ্ছেদ for class 4,একটি শীতের সকাল রচনা class 7,অনুচ্ছেদ শীতের সকাল,ছবি আঁকা অনুচ্ছেদ class 6,শীতের সকাল অনুচ্ছেদ class 6,শীতের সকাল অনুচ্ছেদ for class 6,প্রবন্ধ রচনা শীতের সকাল,শীতের একটি দিন রচনা,শীতের সকাল ২য় শ্রেণী,shiter sokal rochona,রচনা একটি শীতের সকাল,ছবি আঁকা অনুচ্ছেদ class 7,আমার পড়ার ঘর অনুচ্ছেদ রচনা,kagojer full banano,গরু রচনা class 1,শীতের সকালের ছবি,ছবি আঁকা অনুচ্ছেদ,দৃশ্য আঁকা ছবি,haji kacchi ghor,আমাদের গ্রাম সম্পর্কে ১০টি বাক্য,কষ্টের গান,অনুচ্ছেদ ফেরিওয়ালা,পালা গান,o ki garial vai,কুয়াশা নিয়ে উক্তি,শীতের সকাল ছবি,shokal,গান বানানোর নিয়ম,গাছ আঁকা,সূর্য কত দূরে আছে,গ্রামের দৃশ্য ছবি,টাকা নিয়ে কষ্টের উক্তি,ফেরিওয়ালা ছবি,হাতে আঁকা গ্রামের দৃশ্য আঁকা ছবি,walkie talkie bd,কুয়াশা সকাল,রসের হাঁড়ি,সারা বছরের ফুল গাছ,guamara,ঘুম কাটানোর উপায়,বাক্য রচনা বাংলা,রাস্তা নিয়ে উক্তি,ডালিয়া ফুলের ছবি,কষ্টের জীবনের গল্প,রিকশার ছবি,জীবনের কষ্টের গল্প,,,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url