গ্রীষ্মের দুপুর প্রবন্ধ রচনা

গ্রীষ্ম যখন আপন ভাবমূর্তি নিয়ে প্রকৃতিতে ধরা দেয়, তখন বাংলার প্রকৃতি হারাতে বসে বসন্তের সমস্ত ললিত মধুর বৰ্ণিল মাধুর্য। বসন্তের পত্র-পল্লবের সমারোহ, অশোক, পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুন নিভে যায়। কোকিলের ডাক শোনা যায় না। ভ্রমরের গুঞ্জরন, প্রজাপতির ব্যস্ততা সব যেন হারিয়ে যায় কোথায়। 

 গ্রীষ্মের দুপুর

গ্রীষ্ম যখন আপন ভাবমূর্তি নিয়ে প্রকৃতিতে ধরা দেয়, তখন বাংলার প্রকৃতি হারাতে বসে বসন্তের সমস্ত ললিত মধুর বৰ্ণিল মাধুর্য। বসন্তের পত্র-পল্লবের সমারোহ, অশোক, পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুন নিভে যায়। কোকিলের ডাক শোনা যায় না। ভ্রমরের গুঞ্জরন, প্রজাপতির ব্যস্ততা সব যেন হারিয়ে যায় কোথায়। 

গ্রীষ্মের আগমনে বাংলার প্রকৃতি রুক্ষ, বিবর্ণ ও বিশুষ্ক হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড তাপে আকাশ মাটি যেন পুড়ে খাক হয়ে আসে। হারিয়ে যায় অপরূপ সবুজ প্রকৃতির শ্যামল শোভা। ফেটে চৌচির ফসলের মাঠ, নদী শুকিয়ে খটখটে, চারিদিকে কেবল ধু-ধু হাহাকার । ভয়াল রুদ্র  নিয়ে ধুলোর ঝড় তুলে আসে মত্ত কালবৈশাখী। তার প্রচণ্ড ঝাপটায় ছারখার হয়ে যায় চারিদিক। প্রকৃতিকে নতুন করে সাজাতেই যেন সে ভেঙে চুরমার করে দেয় সবকিছু। বাতাসে আগুনের হলকায় প্রাণ আইঢাই করে ওঠে। ঊর্ধ্ব আকাশে চাতকের মতো দৃষ্টি সকলের—কখন একটু বৃষ্টি নামবে। একটু পানি, একটু ঠান্ডা বাতাস আর গাছের শীতল ছায়া পেলে প্রাণ যেন জুড়িয়ে যায়। আর এই রুক্ষতা ও বিবর্ণতার যথার্থ বিমূর্ত রূপ ফুটে ওঠে গ্রীষ্মের দুপুরে।

এ এক অনন্য রূপ। দারুণ অগ্নিবাণে দগ্ধ করতে যে গ্রীষ্মের আগমন, তার যেন পরম প্রকাশ ঘটে গ্রীষ্মের দুপুরে। গ্রীষ্ম ছাড়া অন্য কোনো ঋতুতে ঠিক দুপুরে সেই ঋতুর চরিত্র এমন সুন্দরভাবে ধরা দেয় না।

গ্রীষ্মের দুপুরে প্রচণ্ড তাপে দুষ্কর হয়ে ওঠে ঘরে থাকা। সূর্যের তাপ যেন আগুনের হলকা। ঘরের ভেতর অসহ্য গরম আর বাইরে তাপদাহ। শহুরে লোকেরা তবু বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস উপভোগ করে। কিন্তু অধিকাংশ গ্রামেই বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় সে সুযোগ পাওয়া যায় না। গ্রামবাসীরা গাছের ছায়ায় বসে কিংবা হাতপাখা দিয়ে দুঃসহ গরমের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও ঘোচাবার চেষ্টা করে। প্রকৃতি এ সময় কঠোর রূপ নেয়। যদিও বা বাতাস বয়, সে বাতাস সবকিছু পুড়িয়ে দিতে চায়। তপ্ত হাওয়া মাটিতে লুটিয়ে থাকা শুকনো পাতার দলকে উড়িয়ে নিয়ে যায় দূর-দূরান্তরে। শুকনো পাতার ‘মরমর' আওয়াজ দুপুরের নিস্তব্ধতাকে আরও বেদনাবিধুর করে তোলে।

গ্রীষ্মের দুপুরে গাঁয়ের মানুষের জীবনে নেমে আসে মন্থরতা। মাঠে কোনো কাজ নেই। অলস দুপুরে চোখ জড়িয়ে আসে ঘুমে। প্রখর সূর্যের তাপে বাইরে বের হওয়া অসম্ভব প্রায়। যেসব কৃষক মাঠে কাজ করে তারাও মধ্য দুপুরে কাজ ফেলে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। তপ্ত মেঠো পথে কদাচিৎ জনমানব চোখে পড়ে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর  ছেড়ে বের হয় না কেউ। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের দল গরমের তীব্রতা ভুলে গিয়ে আমের বাগানে ঘুরে বেড়ায়। কখনও বা তারা খানিকটা শুকিয়ে যাওয়া নদী কিংবা পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটে। প্রচণ্ড গরমে পশুপাখিরাও হাঁপিয়ে ওঠে।

রাখাল ছেলে গাছের ছায়ায় গামছা বিছিয়ে দিবানিদ্রা যায়। গ্রামের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মসৃণ পাকা সড়কে উঠে দাঁড়ালে দূরে মরীচিকা দেখা যায়। একটানা কেঁদে চলে উদাসী ঘুঘু। ঘরের ভেতর সবার হাতে থাকে তালপাতার পাখা। কেউ কেউ শীতল পাটি বিছিয়ে অলস দুপুরে অবসর কাটায়। বৌ-ঝিরা কেউ নকশি কাঁথায় ফুল তোলে, কেউ সুতো পাকায়, কেউ দড়ি বানায়। কখন বেলা পড়বে, প্রখর সূর্যের তাপ কমবে সেই প্রতীক্ষা করে সবাই। গ্রামের হাটে এ সময় বেশির ভাগ দোকানেরই ঝাঁপ বন্ধ থাকে। লোক-সমাগমও কম হয়। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ গনগনে

সূর্যতাপে তপ্ত মেঠো পথ দিয়ে দেড়-দু'মাইল পায়ে হেঁটে হাটে আসে না। দুপুর বেলা জনবিরল মেঠো পথে শুকনো পাতা আর ধূলিকণা হাহাকার করে ওড়ে। গ্রীষ্মের দুপুরের বর্ণনা কবির চোখে ধরা পড়েছে এভাবে :

জনশূন্য পল্লীপথে ধূলি উড়ে যায়

মধ্যাহ্ন বাতাসে; স্নিগ্ধ অশখের ছায়

ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিনী জীর্ণ বস্ত্র পাতি

ঘুমায়ে পড়েছে; যেন রৌদ্রময়ী রাতি

ঝাঁ ঝাঁ করে চারিদিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম।

 অনুরূপ রচনা : চৈত্রের দুপুর, চৈতালি দুপুর  

গ্রীষ্মের দুপুরে চারিদিকে কেবল রুক্ষতা আর রুদ্রতা। ফসলহীন শূন্য চৌচির মাঠ, স্রোতহীন শীর্ণ নদী, দীর্ঘ অনাবৃষ্টি এই রুক্ষতা আর রুদ্রতারই রূপ। কবি রবীন্দ্রনাথ ‘মধ্যাহ্ন' কবিতায় গ্রীষ্মের দুপুরের রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে :

বেলা দ্বিপ্রহর।

ক্ষুদ্র শীৰ্ণ নদীখানি শৈবালে জর্জর

স্থির স্রোতহীন। অর্ধমগ্ন তরী 'পরে

মাছরাঙা বসি, তীরে দুটি গরু চরে

শস্যহীন মাঠে। শান্তনেত্রে মুখ তুলে

মহিষ রয়েছে জলে ডুবি। নদীকূলে

জনহীন নৌকা বাঁধা। শূন্যঘাট-তলে

রৌদ্রতপ্ত দাঁড়কাক স্নান করে জলে

পাখা ঝাপটি ।

মাঝে মাঝে ভয়াল মূর্তি নিয়ে আসে কালবৈশাখী। যদিও বিকেলের দিকেই সাধারণত কালবৈশাখী হয়। তবে মাঝে মাঝে দুপুরেও আকাশ কালো করে কালবৈশাখীর তাণ্ডব শুরু হয়। তছনছ করে দিয়ে যায় সবকিছু।

শহরে গ্রীষ্মের দুপুরে নির্জনতার অবকাশ নেই। কর্মকোলাহলময় শহরের যান্ত্রিক বাস্তবতায় গ্রীষ্মের দুপুর একরকম উপেক্ষিত হয় বলা চলে। যারা বিলাসবহুল জীবন-যাপন করেন তাদের কাছে গ্রীষ্মের দুপুরের কোনো অস্তিত্ব নেই। কেননা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আভিজাত্য তাদের গ্রীষ্মের প্রখরতা অনুভব করার সুযোগ দেয় না। তবে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, আর দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার অন্ত থাকে না। জীবনের তাগিদে তাদের বাধ্য হয়েই কাজে নামতে হয়। ঠেলাওয়ালা, রিকশাওয়ালাদের কষ্টের সীমা থাকে না। শহরে তো গাছের ছায়ায় দু’দণ্ড জিরিয়ে নেবার উপায় নেই। গ্রীষ্মকালে পানির ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয়। সে কারণে শিল্প এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎপ্রবাহ সচল রাখতে আবাসিক এলাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়। প্রচণ্ড গরমে মধ্যদুপুরে এই লোডশেডিং যেন অভিশাপ হয়ে আসে। স্কুলফেরতা ছেলেমেয়েদের দেখা যায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। প্রচণ্ড গরমে যানবাহনের ভাড়া বাড়ে, সেই সাথে যানসংকট দেখা দেয়। পথের পাশে বিক্রি হয় আইসক্রিম, তরমুজ কিংবা বেলের শরবত। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে খায় এসব পানীয়।।

গ্রীষ্মের দুপুরে গ্রামের কাঁচাঘর কিংবা শহরের বস্তিতে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ সময় সবকিছু শুকিয়ে থাকে বলে রান্নার সময় একটু অসাবধান হলেই আগুন লেগে যায়। শহরের বস্তিগুলো খুব ঘিঞ্জি থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। অনেক লোক সহায়-সম্বলহীন আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। কখনও কখনও জীবন্ত দগ্ধ হয় মানুষ এবং অন্য প্রাণী। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে ব্যবস্থা নেবার আগেই অনেক কিছু শেষ হয়ে যায়। ভয়াল রুদ্র রূপ নিয়ে শহরেও কালবৈশাখী আসে। দুর্নিবার আক্রোশে মুহূর্তে এলোমেলো করে দিয়ে যায় নগরজীবন।

বাংলাদেশের বিচিত্র ঋতু মাসের সীমারেখা মেনে চলে না। তাই গ্রীষ্ম একটু আগেভাগেই শুরু হয়। চৈতালি দুপুরেই গ্রীষ্মের দুপুরের আমেজ পাওয়া যায়। প্রকৃতির রুদ্র ভয়ঙ্কর রূপের নির্মম প্রকাশ ঘটে গ্রীষ্মের দুপুরে। চারিদিকে কেবল উষ্ণতা, রুক্ষতা আর বিবর্ণতা। প্রকৃতিতে নেমে আসে চরম অস্থিরতা। তবে দুপুরের স্থায়িত্ব কম হওয়াতে কিছুটা স্বস্তিও থাকে।


 আর্টিকেলের শেষকথাঃ গ্রীষ্মের দুপুর প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম গ্রীষ্মের দুপুর প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই গ্রীষ্মের দুপুর প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

গ্রীষ্মের দুপুর রচনা,গ্রীষ্মের দুপুর,একটি গ্রীষ্মের দুপুর প্রবন্ধ রচনা,গ্রীষ্মের একটি দুপুর রচনা,একটি গ্রীষ্মের দুপুর রচনা,গ্রীষ্মের একটি দুপুর রচনা ক্লাস 6,গ্রীষ্মের দুপুর রচনা class 6,গ্রীষ্মের,গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদ class 7,গ্রীষ্মের দুপুর রচনা class 5,গ্রীষ্মের প্রকৃতি,একটি গ্রীষ্মের দুপুরের অভিজ্ঞতা রচনা,গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদ রচনা,গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদ,গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদ class 6,গ্রীষ্মের একটি দুপুর রচনা class 4,কালবৈশাখী ঝড় রচনা,গ্রীষ্মের দুপুর রচনা class 4,প্রকৃতি রচনা,গ্রীষ্মের দুপুর ছবি,গ্রীষ্মের দুপুর drawing,গ্রীষ্মের দুপুরে,গ্রীষ্মের ছবি,একটি গ্রীষ্মের দুপুর ছবি,একটি গ্রীষ্মের দুপুর রচনা class 10,একটি গ্রীষ্মের দুপুর রচনা class 6,অনুচ্ছেদ রচনা গ্রীষ্মের দুপুর,একটি গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদ রচনা,একটি শীতের দুপুরের অভিজ্ঞতা রচনা,একটি গ্রীষ্মের দুপুর,রচনা গ্রীষ্মের দুপুর,কালবৈশাখী ঝড় অনুচ্ছেদ,একটি গ্রীষ্মের দুপুরের অভিজ্ঞতা,গ্রীষ্ম কাল রচনা class 7,গ্রীষ্ম কাল রচনা class 2,গরমের দুপুর,গ্রীষ্মের দুপুরের ছবি,গ্রীষ্মের রচনা,summers are getting hotter essay,কালবৈশাখী রচনা,গ্রীষ্মকালের দুপুর রচনা,summer articles,essay on summer season,grismer dupur rachana in bengali,গ্রীষ্মের একটি দুপুর অনুচ্ছেদ,আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা ভাবসম্প্রসারণ,অনুচ্ছেদ গ্রীষ্মের দুপুর,একটি গ্রীষ্মের দুপুরের ছবি,দুপুর দিয়ে বাক্য রচনা,গ্রীষ্ম ঋতু রচনা,তপ্ত দুপুর,when summer starts,গ্রীষ্ম কাল রচনা class 3,ekti grisser dupur bengali essay,essay summer season,summer article,গ্রীষ্ম কাল রচনা class 4,গ্রীষ্মের দুপুর গ্রীষ্মকাল নিয়ে রচনা,একটি গরমের দুপুর রচনা,,,

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Jubayer Hasan
    Jubayer Hasan 18 October 2023 at 00:27

    আপনার লিখনি খুবই ভালো। এছাড়া আমি প্রায়ই আপনার লেখাগুলি অধ্যায়ন করে থাকি। খুব ভালো লিখেন।

    আমি নিজেউ একজন লেখক। চাইলে আপনি আমাদের লেখাগুলি দেখে আসতে পারেন।

    https://sohobanglait.com/summer-afternoon-essay-bangla-rochona/

Add Comment
comment url