ক্রিকেটে বিশ্বে বাংলাদেশ
*বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও বাংলাদেশ
*বিশ্বকাপ ক্রিকেট
উইলো গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি ব্যাট আর হাতে সেলাই করা কাঠের বলের খেলা ক্রিকেট। সময়ের বহমান স্রোতে ভেসে এই খেলা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার গ্রাম-গ্রামান্তরে শহরের কথা না হয় বাদই পড়লো।
ক্রিকেটের জন্ম সুদূর ব্রিটেনে। ব্রিটেনে খেলার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত রাজা প্রথম এডওয়ার্ডের আমলের একটি গ্রন্থে। একটা সময় ছিল যখন ক্রিকেট খেলতো শুধুই ব্রিটিশরা, কিন্তু ব্রিটিশদের বিশাল সাম্রাজ্যে এই খেলা ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশদের হাত ধরেই।
ক্রিকেটের প্রথম আইন তৈরি হয় ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে। তৈরি করে লন্ডন ক্রিকেট ক্লাব। ১৭৮৭ সালে এম.সি.সি.
(ম্যারিলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব) প্রতিষ্ঠার পর ঐ আইন আরও সংশোধিত ও পরিমার্জিত হয়।
অবিভক্ত বাংলায় ১৭৯২ সালে ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিষ্ঠা ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক।
বাংলাদেশ অর্থাৎ প্রাক্তন পূর্ব বাংলায় ক্রিকেটের প্রচলন ঘটিয়েছিল ব্রিটিশরাই। তখন অবশ্য শুধু ধনী ও অভিজাত ব্যক্তিরাই কেবল ক্রিকেট খেলতেন। পাকিস্তান আমলেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। মূলত বাংলাদেশে ক্রিকেট চর্চা পরিপূর্ণভাবে শুরু হয় সত্তরের দশকের শেষার্ধে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বিশ্বকাপ জয় করার পর বাংলাদেশের ক্রিকেট গতিশীলতা লাভ করে, এরপর সময়ের সাথে সাথে পরিপক্বতা লাভ করে এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৭০-এর দশকের শেষ দিকে। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ প্রথম আই. সি.
সি. ট্রফিতে অংশ নেয়। তাতে বাংলাদেশ ফিজি ও মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল
আই.সি.সি.-র পূর্ণ সদস্য না হয়েও বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে। ১৯৮৬ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় এ যাত্রা। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেট যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল তার প্রথম সফল প্রকাশ ঘটেছিলো ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়। এই পথ পরিক্রমায় ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৭ম বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দেশ পাকিস্তানকে একটি খেলায় হারিয়ে দিয়ে নতুন চমক সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের নতুন ঘটনা ক্রিকেটে ওয়ানডে পরিবারে অন্তর্ভুক্তি অর্থাৎ ওয়ানডে স্ট্যাটাস লাভের মাধ্যমে। এর বছর চারেক পরে ২০০১ সালে টেস্ট ক্রিকেটাঙ্গনে অভিষেক হয় বাংলাদেশের। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে প্রধানত দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় : ১. টেস্ট স্ট্যাটাস পূর্ববর্তী, ২. টেস্ট স্ট্যাটাস পরবর্তী। এ হিসাবে দেখা যায় ২০০১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কেনিয়া, স্কটল্যান্ড এবং পাকিস্তানকে একবার করে হারিয়েছে। অপরদিকে ২০০১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং নামিবিয়া একবার হারিয়েছে। এর মাঝে সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়া বধের কাহিনি ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গিয়েছে শ্রেষ্ঠ অঘটন হিসেবে। এসবই অবশ্য ওয়ানডে পারফরম্যান্স। টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্য জিম্বাবুয়ে ও ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জেতা।
বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে যখন সমালোচনার ঝড় বইছিল তখন ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার ২৫০ রান চেজ করে ৫ উইকেটের জয় সব সমালোচকের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল। টেস্ট পরিবারের নবীনতম এবং বয়সের গড়ে সবচেয়ে তরুণ ক্রিকেট টিম নবীন বাংলাদেশ দলের অনেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিখ্যাত। আফতাব, আশরাফুলের ঝড়ো ব্যাটিং, খালেদ মাসুদের দুর্দান্ত উইকেট কিপিং, রফিকের স্পিন কিংবা নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত মাশরাফি– এরা সকলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ।
১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলকে হারানোর সুখস্মৃতির সঙ্গে এরপর যুক্ত হয়েছে আরও অনেকগুলো জয়ের কাহিনি। আকরাম খান, নানু, পাইলট, বাশার, মাশরাফিদের হাত ধরে এদেশের ক্রিকেট এখন অনেক পরিণত।
২০১১ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে না পারলেও ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে টাইগাররা। সেই সঙ্গেও বিশ্বকাপের অন্যতম সফল আয়োজক দেশ হিসেবেও সারা বিশ্বে সুনাম পেয়েছে বাংলাদেশ। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ব্যক্তিগত অর্জন দিয়েও দেশের জন্য গর্ব বয়ে এনেছেন আমাদের ক্রিকেটাররা। সাকিব অর্জন করেছেন ওয়ান ডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ অল রাইণ্ডারের মর্যাদা। ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল কিংবা দুর্দান্ত বোলার মাশরাফী ভয়ের কারণ হয়েছেন প্রতিপক্ষের কাছে। রুবেল, মুস্তাফিজ, তাসকিন, আল- আমিন বোলিংয়ে দেখিয়েছেন নজর-কাড়া সক্ষমতা।
টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশের অর্জনও কম নয়। সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুলের হাত ধরে তামিম ইকবাল হয়েছেন ক্রিকেটের বাইবেল বলে খ্যাত উইজডেনের বিচারে বর্ষসেরা ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইণ্ডিজের মাটিতে স্বাগতিকদের হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জয় এদেশের ক্রিকেটের অগ্রগতির স্মারক।
সময়ের সাথে সাথে এদেশে ক্রিকেট যে আরও বেশি পরিণত হবে তার লক্ষণ ইতোমধ্যেই চোখে পড়ছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মোড়ল দলগুলো টাইগারদের ক্রমশ শক্তিশালী দল হিসেবে মর্যাদা দিতে শুরু করেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করতে পারলে এদেশও যে একদিন ক্রিকেটের পরাশক্তি হয়ে উঠবে সে প্রত্যাশায় এখন বুক বাঁধছে এদেশের ক্রিকেটার ও ক্রিকেটভক্ত জনগণ ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ক্রিকেটে বিশ্বে বাংলাদেশ - প্রবন্ধ রচনা
শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম ক্রিকেটে বিশ্বে বাংলাদেশ - প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে । যদি আজকের এই ক্রিকেটে বিশ্বে বাংলাদেশ - প্রবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD
Post a Comment